× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ধর্ম ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঘন ঘন ফেরি বন্ধ, কাজে আসছে না ‘ফগ লাইট’

মেহেদী হাসান রনি, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০২ এএম

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে শহীদ বরকত ফেরির ফগলাইট। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে শহীদ বরকত ফেরির ফগলাইট। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ঘন কুয়াশার মধ্যেও ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে উন্নত প্রযুক্তির ফগ অ্যান্ড সার্চলাইটের পরিবর্তে শুধু সার্চলাইট বসানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এসব লাইট ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো কাজেই আসছে না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া। শীতের মৌসুমের শুরু থেকে ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় প্রতিদিন এ রুটে ফেরি চলাচল ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এতে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যা নিরসনে ২০১৫ সালে প্রায় ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি ফেরিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফগ অ্যান্ড সার্চলাইট বসানোর কথা ছিল। সাড়ে সাত হাজার কিলোওয়াটের প্রতিটি লাইট কিনতে খরচ হয় ৫০ লাখ টাকা। অন্যান্য ব্যয়সহ মোট খরচ হয় ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ওই সময় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, নেভিগেশনাল এইড (নৌপরিচালন সহায়ক উপকরণ) সংযোজনের মাধ্যমে এ বাতি দেশের ফেরিতে প্রথম ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু আগের সার্চলাইটে কুয়াশার মধ্যে নৌ-চ্যানেলের মার্কার (বিকনবাতি) যতটুকু দেখা যেত, নতুন স্থাপন করা ফগ লাইটে তা-ও দেখা যায় না। কোনো কাজে না আসায় এগুলো অচল অবস্থায় পড়ে আছে। 

অভিযোগ উঠেছে, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারের মাধ্যমে ফগ লাইটের নামে কেনা লাইটগুলো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এবং সেদেশ থেকে আমদানি দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কিছু যন্ত্রপাতিতে ‘মেড ইন কোরিয়া’ লেখা রয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র দুটি ফেরিতে দুটি লাইট বসানোর সিদ্ধান্ত থাকলেও বিশেষ মহলের চাপে নিয়ম ভেঙে কেনা হয় ১০টি লাইট। ২০১৫ সালের ৫ জুন সেগুলো সংযুক্ত করা হয় ফেরিতে। 

লাইট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জনি করপোরেশন। বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প কমিটির সভায় প্রকল্পের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছিল পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ধাপে দুটি ফেরিতে ফগ লাইট স্থাপন করা হবে। সাফল্য পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, প্রকল্পের পরিচালক সাবেক জিএম (মেরিন) শওকত সরদারসহ প্রকল্পের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) করতে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। প্রকল্পের সদস্যরা সেখানে বসেই প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন কাজটি সম্পন্ন করেন। 

সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফগ লাইট ফেরিতে স্থাপনের সময় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলে প্রকল্পের রিসিভিং কমিটির সদস্যরা লাইটগুলো গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। শিডিউলের সঙ্গে ‘ফগ লাইটের’ মালপত্রের মিল না থাকায় কমিটি তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে। একপর্যায়ে কমিটির কয়েকজনকে বদলিসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে লাইটগুলো গ্রহণে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। 

সূত্র জানায়, ঘন কুয়াশার মধ্যে নির্বিঘ্নে ফেরি চলাচলের জন্য ১০টি ফগ অ্যান্ড সার্চলাইট কেনার আগে তা পরীক্ষা করা হয়েছিল গ্রীষ্মকালে দিনের বেলায়। ২০১৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির আকাশে যখন ঝলমলে রোদ, সেই সময় ওই লাইট জ্বালিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন বিআইডব্লিউটিসির চার কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, বিআইডব্লিউটিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী ড. জ্ঞানরঞ্জন শীল, জিএম (মেরিন) ক্যাপ্টেন শওকত আলী সরদার (ডিরেক্টর অপারেশন) এবং উপসচিব পঙ্কজ কুমার পাল ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে এ ফগ লাইট পরীক্ষার জন্য গেলেও তারা মূলত প্রমোদ ভ্রমণ করেন সেখানে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা লাইট পরীক্ষার জন্য কাজ করেন তারা। ফেরিতে ফগ লাইট স্থাপনের কয়েক মাস না যেতেই দেখা যায়, কুয়াশা ভেদ করে ফেরি চলাচল করতে পারছে না। কারণ ফগ অ্যান্ড সার্চলাইটের পরিবর্তে শুধু সার্চলাইট যুক্ত করা হয় ফেরিতে। এ নিয়ে ২০১৭ সালে তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নিম্নমানের সার্চলাইট সরবরাহ করে ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিআইডব্লিউটিসির তিন কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। 

২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেরিগুলোতে বাস্তবে ফগ অ্যান্ড সার্চলাইটের কোনো অস্তিত্বই নেই। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংযোজিত লাইটগুলোর গায়ে ও কন্ট্রোল সুইচে সার্চলাইট লেখা। এগুলো ফগ লাইট নয়। মূলত এ সার্চলাইটগুলো সাত হাজার ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। যদিও বিআইডব্লিউটিসির ক্রয়-সংক্রান্ত নথিতে সার্চ অ্যান্ড ফগ লাইট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।  কিন্তু নানা অজুহাতে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বিআইডব্লিউটিসি। 

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কুয়াশার সময় ফেরি বন্ধ থাকলেও সংস্থার আয়ে তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। কারণ যাতায়াতকারী যানবাহনগুলো শীত মৌসুমে কুয়াশার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চলাচল করে থাকে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা