রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, শ্রীপুর (গাজীপুর)
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৫৮ পিএম
গাজীপুরের শ্রীপুরে একরাতে এক্সেসরিজ কারখানা এবং সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্টের বাড়িসহ তিন বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতির শিকার পরিবারের সদস্যদেরকে অচেতন করে ওইসব বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়। ডাকাতেরা ওইসব বাড়ি থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান মালামাল লুটে নেয়। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া এবং ভেড়ামতলী গ্রামে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
ডাকাতির শিকার প্রতিষ্ঠান চকপাড়া গ্রামের সানা এক্সেসরিজ কারখানা লিমিটেড এবং ভেড়ামতলী গ্রামের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ইউসুফ, আনিসুর রহমান ও মোকসেদ আলীর বসতবাড়িতে ডাকাতি করা হয়।
সানা এক্সেসরিজ কারখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার আসাদুল্লাহ জানান, রাত ৩টার দিকে নিরাপত্তা প্রহরী মাসুদকে ডাকাতেরা বেঁধে রেখে কারখানায় প্রবেশ করে। নির্মানাধীন কারখানায় তেমন কিছু না থাকায় ডাকাতেরা ৫টি ইলেক্ট্রিক তারের কয়েল, ২টি মোটর এবং ৫টি প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে যায়।
ডাকাতির শিকার ভেড়ামতলী গ্রামের আনিসুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে খাবারের পর তার ভাইয়ের বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজ দেখতে ছাদে ওঠেন। এসময় ছাদে দাঁড়ানো অবস্থায় তিনি পড়ে যান। তাকে বাড়িতে নিয়ে আসলে দেখেন তার মা, স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েও অসুস্থ। রাত হলে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। এর মধ্যে রাত ২টার দিকে ডাকাতেরা ঘরে ঢুকে নগদ ৩২হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, একটি মোবাইল ফোন এবং মূল্যবান মালামাল লুটে নেয়। তাদের প্রত্যেকেই অচেতন থাকায় কিভাবে ডাকাতেরা ঘরে ঢুকলো তার কিছুই বলতে পারেনি। পরে সকালে স্বজনেরা তাদের বাড়িতে এসে ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে তাদেরকে ডেকে তুললে ডাকাতির বিষয়টি বুঝতে পারেন।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ইউসুফ বলেন, আমি বাড়িতে থাকি না। সকালে এক আত্মীয় ফোনে জানান আমার বাড়ির কেচি গেইট খোলা এবং ঘরের আসবাবপত্র এলামেলো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তখন বাড়িতে এসে দেখতে পাই আমার ঘরের ওয়ারড্রপ, আলমিরা এবং শোকেস থেকে মূল্যবান কাপড়চোপড় লুটে নিয়েছে। বাড়িতে না থাকায় ঘরে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না।
মোকসেদ আলীর ছেলে পোশাক শ্রমিক নাজমুল হোসাইন জানান, আমি সকালে বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার নিয়ে অফিসে যাই। আমার সঙ্গে আমার এক সহকর্মীও দুপুরের খাবার খান। দুপুরের খাবারের পর আমিসহ আমার সহকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়লে কারখানা থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় আসি। এসে দেখি আমার স্ত্রী, মা এবং বাবা অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। পরে রাত তিনটার দিকে স্টিলের দরজা বাইর থেকে ছিদ্র করে সিটকানি খুলে ভিতরে ঢুকেছে। এসময় মুখোশ পরা তিন ডাকাত তার স্ত্রীর গলার চেইন, কানের দুল এবং নগদ টাকা লুটে নেয়।
অপরদিকে, গত মঙ্গলবার পাশের শিমলাপাড়া গ্রামের মোটরসাইকেল পার্টস ব্যবসায়ী মাসুদ জামাল, তার ভাই সেনা সদস্য আব্দুস সালামের বাড়িতে একই কায়দায় ডকাতি হয়। ওইদিন রাত ৪টার দিকে একই কায়দায় ডাকাতেরা ঘরে প্রবেশ করে। তারা বাড়ির লোকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই বাড়ি থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার এবং মূল্যবান মালামাল লুটে নেয়। এর আগের দিন দুপুর থেকে ওইসব বাড়ির গৃহকর্তা, গৃহকর্তী, ছেলেমেয়ে এবং বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদেরকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে আসলে রাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, এগুলো ডাকাতি না, চুরি হয়েছে। চক্রটিকে ধরার জন্য পুলিশ কাজ করছে। প্রসঙ্গত, দুই দিনের ব্যবধানে ডাকাতির আগের দিন বাড়ির সদস্যদের অচেতন করা হয়। পরে ওই রাতেই ওইসব বাড়িতে ডাকাতেরা হানা দিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার এবং মূল্যবান মালামাল লুটে নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।