মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা
খুলনা অফিস
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:০০ এএম
সুশোভন বাছাড়। ছবি: সংগৃহীত
‘বিশ্বাস হচ্ছিল না প্রথম হয়েছি। প্রথমে রেজাল্ট পেয়ে মনে হয়েছিল ভুল আসছে। কারণ শীর্ষ দশের মধ্যে রেজাল্ট থাকবে ভেবেছিলাম, প্রথম হব ভাবিনি। অনলাইনে রেজাল্ট কয়েকবার দেখার পর নিশ্চিত হলাম- না, আমিই প্রথম হয়েছি। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। অনুভূতিটা আসলেই বুঝিয়ে বলতে পারব না।’
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করা খুলনার শিক্ষার্থী সুশোভন বাছাড় সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে প্রকাশিত ফলাফলে সুশোভন বাছাড় সর্বোচ্চ ৯০ দশমিক ৭৬ নম্বর পেয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।
খুলনা মহানগরীর বয়রা আজিজের মোড় এলাকায় সুশোভনদের পরিবারের বাস। তাদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নে। পিতা সুভাস চন্দ্র বাছাড় খুলনার টিঅ্যান্ডটি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। মা বন্দনা সেন এক সময় শিক্ষক ছিলেন। এখন গৃহিণী। সুশোভন তাদের একমাত্র সন্তান।
সুশোভন নগরীর টিঅ্যান্ডটি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেন।
মেধাবী এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। সেই লক্ষ্য পূরণে প্রথম থেকেই চেষ্টা করি বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে কনসেপ্টগুলো ক্লিয়ার করে এগিয়ে যেতে। এগুলোতে দুর্বলতা থাকলে ভর্তি পরীক্ষায় সমস্যা হয়ে যাবে। সেভাবেই লেখাপড়া করে এগিয়েছি।’
লেখাপড়া ও পছন্দের বিষয়ে সুশোভন বলেন, ‘কখনও টাইম হিসাব করে পড়াশোনা করিনি। অতিরিক্ত রাত জেগে কখনও পড়িনি এবং এটাকে সাপোর্টও করি না। পড়ার বাইরে খেলাধুলা ও বই পড়া খুব পছন্দ করি। গল্প, উপন্যাস থেকে শুরু করে সায়েন্স ফিকশন, থ্রিলার-জাতীয় বই আমার খুব প্রিয়।’
ভালো ফলাফলের জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই কৃতী শিক্ষার্থী।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘একজন ভালো ডাক্তার হওয়ার পাশাপাশি ভালো মানুষ হতে চাই। ভালো মানুষ হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা আমার পরিকল্পনা। আশা আছে গরিবদের জন্য একটি আলাদা হাসপাতাল করে দেশ গড়তে কিছুটা হলেও যেন অবদান রাখতে পারি।’
সুশোভন বাছাড় বলেন, ‘আমার লেখাপড়ায় বাবা-মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। তারা আমার প্রতি একটু বেশিই যত্নবান ছিলেন। আমার মা বয়রা গার্লস স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি আমার লেখাপড়ার জন্য তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। শিক্ষকরাও আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
সুশোভনের বাবা সুভাস চন্দ্র বাছাড় বলেন, ‘ছেলের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। সেই অনুযায়ী সে নিজেকে গড়ে তুলেছে। এইচএসসি পর্যন্ত সে কোনো শিক্ষক বা কোচিংয়ে লেখাপড়া করেনি। বাড়িতে পড়েই সে পরীক্ষা দিয়েছে। তবে মেডিকেলে ভর্তির সময়ে অনলাইন ও অফলাইনে কোচিং করেছে। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ও বলেছিল যে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পাবে। ছেলে ভালোভাবে চান্স পাবে বিশ্বাস করতাম। তবে প্রথম হবে এতোটা ভাবিনি। ছেলের সাফল্যে পিতা হিসেবে অনেক ভালো লাগছে।’
সুশোভনের মা বন্দনা সেন বলেন, ‘ছেলের রেজাল্ট শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ওর স্বপ্ন একজন নামকরা ডাক্তার হওয়ার। আশীর্বাদ করি ছেলের স্বপ্ন পূরণ হোক।’