বাবরের মুক্তি
নেত্রকোণা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:০৬ পিএম
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:১৬ পিএম
নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের তিনটি উপজেলা মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও মদন। এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১৬০ নম্বর ও নেত্রকোণা-৪ আসন। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তিনি শুধু একজন সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রীই নন, হাওরবেষ্টিত জনপদের সাধারণ মানুষের কাছে তিনি একজন জনদরদী, দানবীর ও তুমুল জনপ্রিয় নেতা হিসেবে খুবই সুপরিচিত।
তবে ২০০৭ সাল থেকে কারাবন্দি অবস্থায় ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। এর ইমধ্যে গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকল মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে তিনি কারামুক্ত হন।
তার মুক্তির সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আনন্দের হাওয়া বইতে শুরু করে নেত্রকোণা জেলা জুড়ে। উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেন বিএনপি ও দলটির সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন আনন্দ মিছিল নিয়ে। হয়েছে মিষ্টি বিতরণও।
এছাড়া বাবরের আগাম কারামুক্তির খবর পেয়ে গত বুধবার রাতেই জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার লোকজন বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাকে করে ঢাকায় চলে যান প্রিয় নেতাকে বরণ করতে।
এদিকে বাবরকে বরণ করতে তার নিজ উপজেলা মদন পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলোতে বাবরের ফেস্টুন সম্বলিত তোরণ নির্মাণ করে দলীয় নেতাকর্মীসহ হাওর জনপদের সাধারণ জনতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারাগার থেকে বের হয়ে লুৎফুজ্জামান বাবর প্রথমে জিয়াউর রহমানের মাজারে যান। সেখান থেকে বনানী হয়ে আরাফাত রহমাম কোকোর কবর জিয়ারত করেন এবং শেষে গুনশাল-২ এর বাসায় গিয়ে উঠেন। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার ও বুধবার নাগাদ লুৎফুজ্জামান বাবর নিজ এলাকা নেত্রকোনায় আসার কথা রয়েছে।
মুক্তির দাবিতে দীর্ঘদিন যাবৎ লুৎফুজ্জামান বাবরের নিজ উপজেলা মদন, জেলা বিএনপি ও দলটির সহযোগী অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে মিছিল-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছিল। এসব কর্মসূচিতে বাবরপ্রেমী সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লুৎফুজ্জামান বাবর সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকার মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলাসহ জেলার সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। যে কারণে তিনি পুরো জেলাবাসীর কাছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই জনগণের আস্থাভাজন ও প্রিয় হয়ে উঠতে পেরেছিলেন।
নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট মাহফুজুল হক বলেন, সাড়ে ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে ফরমায়েশি রায় দিয়ে আমাদের ভাটি বাংলার সিংহ পুরুষ লুৎফুজ্জামান বাবরকে কারাবন্দি রেখেছিল। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তিনি মুক্ত হয়েছেন। এ জন্য নেত্রকোণা জেলাবাসী ও জাতীয়তাবাদী শক্তি খুবই উল্লসিত ও উচ্ছ্বসিত।
জেলার মদন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, আমরা আমাদের প্রিয় নেতাকে বরণের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। লুৎফুজ্জামান বাবরের মতো একজন খাঁটি জনদরদী নেতা বর্তমানে বিরল। তিনি যেদিন নিজ উপজেলা মদনে আসবেন, সেদিন তাকে বরণ করতে হাওরাঞ্চল জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
জেলার মদন উপজেলার নায়েকপুর গ্রামের বাবর ভক্ত আব্দুল্লাহ খান বলেন, আমাদের মতো গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে তিনি অত্যন্ত মূল্যায়ন করতেন। দল, মত নির্বিশেষে তিনি সকলেরই কথা শুনতেন। তার কাছে গিয়ে কেউ কোনো দিন খালি হাতে ফিরে আসতে হয়নি। তার সময়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তাই তিনি সাধারণ মানুষের প্রিয় নেতা। তার মুক্তিতে আমরা আনন্দিত।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৫৮ সালের ১০ অক্টোবর নেত্রকোনার হাওরবেষ্টিত মদন উপজেলার বাড়িভাদেরা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা এ কে লুৎফর রহমান, মা জোবায়দা রহমান। বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর তৃতীয়। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০০১ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি তৎকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২০০৭ সাল থেকে গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় জেলে ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর।