গাজী মো. মাসুদ রানা, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর)
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:২২ পিএম
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:২৫ পিএম
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর নদীর পাড় ঘেঁষে ছোট মাছুয়া ইউনিয়নের কাটাখাল এলাকা। এখানে গড়ে উঠেছে শুঁটকিপল্লী। চলতি মৌসুমে ব্যবসায়ীরা লইট্যা, চাপিলা, ঢেলা, ফ্যাপসা, ছুরি, পোয়াসহ ৪০-৪৫ প্রজাতির মাছ শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত। সরকারি তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, মঠবাড়িয়ায় নদী ও সাগরে প্রায় ৯ হাজার জেলে মাছ শিকার করে থাকে। এটাই তাদের প্রধান জীবিকা।
এসব জেলের কাছ থেকে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে ব্যবসা করে থাকে। ব্যবসায়ীরা শুঁটকি তৈরিতে নির্দিষ্ট পথে হাঁটে। প্রথমে মাছ পরিষ্কার করা হয়। তারপর কাটাকাটির পর্ব শেষ হয়। অবশেষে বাঁশের মাচায় সূর্যরস্মিতে সারিবদ্ধভাবে মাছ শুকাতে দেওয়া হয়। শুঁটকিপল্লীতে পাঁচটি জায়গায় শুঁটকি তৈরি করা হয়।
ব্যবসায়ীদের দাবি প্রাকৃতিক উপায়ে ও কেমিক্যাল ছাড়াই শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ চলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই শুঁটকি সরবরাহ করা হয়। বছরে প্রায় কোটি টাকার শুঁটকি কেনাবেচা চলে।
খেজুরবাড়িয়া গ্রামের শ্রমিক লাইলী বেগম বলেন, এই পল্লীতে অনেক দিন হলো কাজ করছি। প্রতি ঘণ্টা কাজ করে পাই ৫০ টাকা। সারাদিন করলে পাই ৫ থেকে ৬শ টাকা। কোনোদিন কাজ থাকে। আবার কোনোদিন থাকে না। এর ওপর নির্ভর করেই সংসার চলে। এখানে প্রায় ৫০ জন শ্রমিক কাজ করে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী মিলন হাওলাদার বলেন, এ খাতে অনেক সমস্যা রয়েছে। সরকারি কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না। অন্যের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। আমরা আশা করি, এ খাতে সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সরকার এগিয়ে আসবে। সেইসঙ্গে শুঁটকিপল্লীর জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান সরকার ঠিক করে দেবে। এ ছাড়া এখানে যোগাযোগব্যবস্থা মোটেই ভালো নয়। রাস্তার এমন বেহাল দশা যে বড় বড় পণ্যবাহী গাড়ি আসতে পারে না। যদি আসতে পারত তাহলে পরিবহন খরচ অনেক কম লাগত। এতে আমাদের ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠত।
শুঁটকি ব্যবসায়ী গফফার মিয়া বলেন, আমরা যে শুঁটকি তৈরি করি তাতে কোনো বিষ বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না। ট্রলার থেকে মাছ কিনে এনে এক দিনের জন্য লবণপানিতে রেখে দেই। পরে বাঁশের মাচা ও বেড়ায় মাছ শুকাতে দেই। ৯/১০ দিনের মধ্যে কাঁচামাছ শুঁটকিতে রূপান্তরিত হয়। তিনি আরও বলেন, আমি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এ ব্যবসা করছি। কিন্তু ঋণের জন্য যে পরিমাণ সুদ গুনতে হয়, তাতে টিকে থাকা খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে। তা ছাড়া মাছের দামও খুব বেশি। ফলে খুব একটা লাভ হয় না।
শুঁটকিপল্লী এলাকার বাসিন্দা বিষু হালদার বলেন, কাটাখাল শুঁটকির পল্লী হিসেবে সবার কাছেই পরিচিত। এখানে বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরি করা হয়। তাই শীত মৌসুম ঘিরে এই চরে শুঁটকি তৈরির হিড়িক পড়েছে। এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ ধরা পড়ছে। তাই আশা করছি, দেশ-বিদেশে এই শুঁটকি রপ্তানি করে ভালোই লাভবান হওয়া যাবে।
ব্যবসার প্রসার বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগের কথা বলেছেন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, শীত মৌসুমে ৭-৮ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়ে থাকে, যার দাম প্রায় কোটি টাকা। এই পল্লীতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। ব্যবসায়ীরা যাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায় তা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আনা হয়েছে।