কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:২৫ পিএম
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৯ পিএম
বাবার সাথে শিশু মোহাম্মদ আরাকান। প্রবা ফটো
রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গত ৮ জানুয়ারি মোহাম্মদ আরাকান নামে এক শিশু খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর ১০ জানুয়ারি তার পরিবারের সদস্যরা অজ্ঞাত মোবাইল কলের মাধ্যমে জানতে পারে আরাকানকে অপহরণ করা হয়েছে। ছাড়িয়ে নিতে হলে সাত লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। মুক্তিপণ না পেলে শিশু আরাকানকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি শিশুর শরীরের গলা থেকে নিচের অংশ মাটির গর্তে পুঁতে রাখা। শিশুটির চোখে-মুখে ভয়। এই অবস্থায় রোহিঙ্গা ভাষায় শিশুটি তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলছিল, ‘আব্বা তরাতরি চেষ্টা গর। মরে গাতত গলায় পিল্লে। টিয়া দে' (বাবা দ্রুত চেষ্টা কর, আমাকে গর্তে পুঁতে ফেলেছে, টাকা দাও)। ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ অনুসন্ধান করে জানতে পারে , ১৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ১০ জানুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়ার অজ্ঞাত স্থানে ধারণ করা। ভিডিওর শিশুটির নাম নিখোঁজ হওয়া মোহাম্মদ আরাকান (৬)। সে থাইংখালী-১৯ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-১৫ ব্লকের বাসিন্দা আবদুর রহমান ও আনোয়ারা বেগমের ছেলে। ৮ জানুয়ারি শিশুটি এপিবিএন অফিসসংলগ্ন খেলার মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হন।
শিশুটির বাবা আবদুর রহমান বলেন, ‘৮ জানুয়ারি বেলা দুইটার দিকে এপিবিএন অফিস সংলগ্ন খেলার মাঠে খেলতে গিয়ে আর ফেরেনি আরাকান। দুই দিন ধরে আরাকানের সন্ধানে তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে ঘুরেছেন। পুলিশের কাছেও গেছেন। এপিবিএনের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। এরপর ১০ জানুয়ারি দুটি মুঠোফোন নম্বর থেকে কল দিয়ে বলা হয়, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ছাড়িয়ে নিতে হলে সাত লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। টাকা না পেলে ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন।'
আবদুর রহমান আরও বলেন, ‘অপহরণকারীরা মুক্তিপণের জন্য ছেলেকে মাটিতে পুঁতে রেখে ভিডিও করে। আমার স্ত্রীর কানের দুল বিক্রি করে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা পাঠাই। এরপরও তাকে না ছাড়ায় ক্যাম্পের আত্মীয়স্বজনসহ অন্যান্য লোকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাঠাই। ১৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে এমএসএফ হাসপাতালের সামনে আরাকানকে ফেলে যায় তারা।’
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখে অনেক ব্যবহারকারী টেকনাফ-উখিয়া এলাকার সাম্প্রতিক অপহরণ বাণিজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৯৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে একই সময়ে উখিয়ায় বিভিন্ন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির থেকে ৮৬ জনকে অপহরণ করা হয়।