মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:১৪ এএম
প্রকল্প না থাকায় মৎসখাতের উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। এতে রংপুর বিভাগে মাছ উৎপাদনে মিটছে না বাৎসরিক চাহিদা। প্রবা ফটো
রংপুর বিভাগে মাছ উৎপাদনে মিটছে না বছরের চাহিদা। এতে আমিষে পিছিয়ে পড়ছে উত্তরের জেলাগুলোর মানুষ। মাছের উৎপাদন বাড়াতে প্রকল্প না থাকায় তৈরি হচ্ছে না নতুন উদ্যোক্তা। এতে মাছ উৎপাদনে বিভাগে দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে রংপুর বিভাগে রংপুর বিভাগ মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প, ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প, জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প-এনএটিপি-২, জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য আবাসস্থল উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলেছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে প্রদর্শনী, মাঠ দিবস, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করেছে মৎস্য বিভাগ। এ ছাড়া জলাশয় সংস্কার, বিলগুলোতে অভয়াশ্রম তৈরি, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, কমিউনিটি ভিত্তিক মাছ চাষ, আয়বর্ধক উপকরণ বিতরণ, সরকারি খামার উন্নয়ন, হ্যাচারি স্থাপনসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগের বেশিরভাগ মাটি বেলে ও বেলে দোআঁশজাতীয় হওয়ায় জলাশয়, খাল-বিল ও পুকুরের পানি ধারণক্ষমতা কম। এতে বর্ষা মৌসুম ছাড়া মাছ চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। মৎস্যচাষিদের শুকনো মৌসুমে সেচের মাধ্যমে বাড়তি খরচ করে মাছ চাষ করতে হয়। গত বছর থেকে বিভাগে মৎস্য উন্নয়নে কোনো প্রকল্প চালু নেই। এতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি কার্যক্রম হোঁচট খায়।
সূত্র আরও জানায়, রংপুর বিভাগের তিন লাখ পুকুর, এক হাজার ২০০ ছোট-বড় বিলে মাছের চাষ হচ্ছে। এতে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, মিররকার্প, কার্ফুসহ নানা প্রজাতির কার্প এবং পাবদা, গুলশা, মাগুর, কইসহ নানা প্রজাতির দেশি প্রজাতির মাছের চাষ হচ্ছে। এসব মাছ উৎপাদনে ৮৮ হাজার মৎস্যজীবী ও দুই লাখ ২০ হাজার মাছচাষি জড়িত রয়েছে। বর্তমানে বিভাগে মাছের বাৎসরিক চাহিদা রয়েছে তিন লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে তিন লাখ ছয় হাজার মেট্রিক টন। প্রতি বছর মাছের ঘাটতি হচ্ছে ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ১০ শতাংশ মাছের ঘাটতি রয়েছে রংপুর বিভাগে।
সম্প্রতি সরেজমিনে বিভাগের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন এ প্রতিবেদক। রংপুর নগরীর ফুল আমেরতল এলাকার মাছচাষি মেহেদী হাসান তিন একর আয়তনের পুকুরে নানা কার্পজাতীয় মাছ চাষ করেছেন। শুকনো মৌসুমে কয়েকদিন অন্তর তার পুকুরে পানি দিতে হচ্ছে। মেহেদী হাসান বলেন, শীতের সময় পুকুরে পানি থাকে না। এজন্য মোটর দিয়ে প্রায় প্রতিদিন পানি দিতে হয়। সরকার কৃষিকাজে সেচের জন্য বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট বিল চার টাকা করে নেয়। অথচ মাছচাষিদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ১৩ টাকা করে দিতে হচ্ছে।
মিঠাপুকুর বালারহাটের মৎস্যচাষি মোখলেছার রহমান বলেন, ‘আমি পুকুরে দেশি প্রজাতির মাছের চাষ করি। ইদানীং মাছের খাবার, চাষের উপকরণের দাম বাড়লেও মাছের দাম বাড়েনি। মৎস্য অফিস থেকে কিছু সহযোগিতা পেলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম।’
রংপুর বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম বলেন, রংপুর বিভাগে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নয়নে কোনো প্রকল্প চালু নেই। প্রকল্প না থাকায় মাছচাষিদের মধ্যে নতুন প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে রাজস্ব খাত দিয়ে মাছচাষিদের প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণসহ মাছ চাষ সম্প্রসারণে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মাছের অভয়াশ্রমগুলোর উন্নয়নসহ মাছের উৎপাদন বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উন্মুক্ত জলাশয়গুলোতে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কোনো প্রকল্প চালু হলে রংপুর বিভাগে মৎস্য খাতের উন্নয়ন আরও বেগবান হবে।