× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অসময়েও থেমে নেই নদীভাঙন

মশিউর রহমান রাসেল, নলছিটি (ঝালকাঠি)

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:৪৩ এএম

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের কাঠিপাড়া গ্রামের হাওলাদার বাড়ির মসজিদের পাশে। প্রবা ফটো

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের কাঠিপাড়া গ্রামের হাওলাদার বাড়ির মসজিদের পাশে। প্রবা ফটো

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, সড়ক, কালভার্ট, বসতঘর, কবরস্থান, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। গত কয়েক বছরে ভাঙনের তীব্রতা বাড়লেও ভাঙনরোধে এখনও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এলাকাবাসীর দাবি একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের।

গত শনিবার সরেজমিনে ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে জানা যায়, নলছিটি উপজেলার মগর ও ভৈরবপাশা ইউনিয়নে ভাঙনের তীব্রতা বেশি। এ সময় স্থানীয়রা জানায়, এরই মধ্যে মগর ইউনিয়নের বহরমপুর, সিকদারপাড়া, খোজাখালি ও কাঠিপাড়া এলাকার সাতটি সড়ক ও দুটি কালভার্ট নদীগর্ভে চলে গেছে। এর আগে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশ বসতবাড়ি ও শত শত বিঘা ফসলি জমি, বহরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহরমপুরের কয়েকটি জামে মসজিদসহ বহু স্থাপনা ও কৃষিজমি। এতে ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছে এলাকার বহু বাসিন্দা। যথাসময়ে ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ছোট হয়ে গেছে বহরমপুর গ্রামের মানচিত্র। নদীর ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বারবার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের দ্বারস্থ হলেও এখনও মেলেনি কোনো টেকসই সমাধান।

গত ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর বহরমপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীন মৃধার বাড়িঘর ভেঙে নদীতে চলে যায়। তখন তার বাড়ির সামনে জরুরি ভিত্তিতে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা ভাঙনরোধে তেমন কোনো কাজে আসেনি।

নদীর তীরের বাসিন্দা বহরমপুর গ্রামের রহমান মৃধা বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার কবরের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যাওয়ার পথে। সব সম্পদ হারিয়েও এখন এই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়েও হেরে যাচ্ছি আমরা।’ তিনি বলেন, ‘বহরমপুর মৌজায় বাপ-দাদার নামে ১০০ বিঘার বেশি জমি ছিল, যার প্রায় পুরোটাই নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন আমাদের থাকার জায়গা নাই। আমরা দ্রুত এই ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

ভাঙনের ঝুঁকিতে দিন কাটানো নদীর তীরের আরেক বাসিন্দা মতলেব লস্কর বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার সবকিছু নদীর পেটে চলে গেছে। বৃদ্ধা মায়ের শেষ ইচ্ছার কারণে আমরা এখনও ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসবাস করছি। যেকোনো সময় এই শেষ চিহ্নটিও ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় আছি। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

মগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাসুম লস্কর শাহাজাদা বলেন, ‘বহরমপুর, ঈশ্বরকাঠি, কাঠিপাড়া উত্তমাবাদÑ এ চারটি গ্রামে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০০ বসতবাড়ি, তিনটি মসজিদ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি স্লুইস গেট ভেঙে নদীতে মিশে গেছে। সামনে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস কিংবা বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ।’ তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত অনেকবার পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়েছে। কিন্তু সরকারি কোনো সংস্থা ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আকুল আবেদন, অতিদ্রুত বহরমপুর জয়নাল মৃধার বাড়ি, লস্কর বাড়ি, বহরমপুর খান বাড়ি মসজিদসহ গ্রামের অস্তিত্ব রক্ষা করার দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে চললে আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে বহরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সম্পূর্ণ গ্রামটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ ছাড়া ভয়াবহ ভাঙনের মুখে রয়েছে খোঁজাখালি, দড়ির চর, কাঠিপাড়া, মাঠিভাঙ্গা, সরই, অনুরাগ, গৌরিপাশা, পুরান বাজার, ষাটপাকিয়া ফেরিঘাটসহ আশপাশের গ্রামগুলো। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় পৌর এলাকার দড়ির চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে। একইভাবে বিলীনের পথে পৌরসভার সিকদারপাড়া জামে মসজিদ ও খোজাখালির পুরোনো মসজিদ।’

বহরমপুর গ্রামের বাসিন্দারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা পোড়া কপাল নিয়ে জন্মেছি। সব হারিয়েছি তাতেও কষ্ট নেই। কিন্তু বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান ও পূর্বপুরুষদের কবরস্থানগুলোও সুগন্ধা নদী গ্রাস করেছে। তাদের জন্য কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়াও করতে পারি না। এই চাপা কষ্ট কাউকে বোঝানো যাবে না। একরের পর একর জমি ছিল, ছিল গোলাভরা ধান। এখন কিছুই নেই। আমাদের খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই।’

এলাকার বাসিন্দা মো. আলী বলেন, ‘প্রায় এক দশক আগে নদীতে ভাঙন শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ভাঙনরোধে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’ তীব্র ভাঙনের ফলে ফাঁড়ির বাজারে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।

এ ব্যাপারে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙনরোধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’

জেলা পাউবো প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, ‘টেকসই নদীরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সুগন্ধা নদীর চারটি স্থানে নদীরক্ষা কাজের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। খোজাখালি, মগর ইউনিয়নের সুজাবাদ, ভৈরবপাশা ইউনিয়নের ঘাটপাকিয়া ফেরিঘাট এলাকা ও দপদপিয়া ইউনিয়নের তিমিরকাঠিতে চলতি বছর কাজ শুরু করা হবে। কাজগুলো শেষ হলেই এ এলাকার ভাঙনরোধ হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা