নারায়ণগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৬ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৮ পিএম
নারায়ণগঞ্জের পথসভায় হাসনাত আব্দুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে কিনা সেটা এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে ৫ আগস্ট। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিটা নেতাকর্মীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
মঙ্গলবার (১৪
জানুয়ারি) সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের
ঘোষণাপত্র প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ
বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী বাংলাদেশ হবে অতীতের রাজনীতির অভিজ্ঞতা ও তরুণ প্রজন্মের
মনোভাবের সংমিশ্রণে। তরুণদের যদি মাইনাস (বাদ) করার চিন্তা থাকে তাহলে আমরা বলতে চাই-
এ আন্দোলনে যত ক্রিয়াশীল ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ছিল তারা সবাই বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এসে এ ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, সবার
আগে আওয়ামী লীগের বিচার হতে হবে। যে সব টকশোজীবী ও বুদ্ধিজীবী এখন আওয়ামী লীগের মানবাধিকারের
জন্য সরব হয়েছেন, আপনারাই এত দিন ফ্যাসিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পক্ষে যে
কলম লিখবে আমরা সেই কলম ভেঙে দেব। যে মিডিয়া ফ্যাসিবাদের পক্ষে দাঁড়াবে আমরা তাদের
বিরুদ্ধে দাঁড়াবো। আপনারা যদি তরুণ প্রজন্মের কথা বুঝতে ব্যর্থ হন তাহলে আওয়ামী লীগের
মতোই আপনাদের পরিণতি হবে।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগের
রাজনীতির পুনর্বাসন করতে চান তাদের বলতে চাই, আওয়ামী লীগের রাজনীতি পুনর্বাসিত হবে
কিনা সেটা প্রশ্ন নয়। তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচারের আগে যারা
পুনর্বাসনের কথা বলবে, যারা বলবে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না, আমরা ধরে নেব আওয়ামী
লীগ যে জাহেলিয়াতের রাজনীতি কায়েম করেছিল তারাও তার দোসর ছিল।’
পথসভায় হাসনাত
আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের আল্টিমেটাম (সময়সীমা) ১৫ তারিখ পর্যন্ত। সব রাজনৈতিক দলের
ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রক্লেমেশন (ঘোষণাপত্র) করা হবে বলে অন্তর্র্বতী সরকার আমাদের
কমিটমেন্ট (ওয়াদা) দিয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো আমরা এখনও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখিনি।
আমাদের উপদেষ্টাদের বলতে চাই- আপনারা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনাদের যদি মনে হয়
এখানে কোনো বাধা থাকে সেটা জনগণের সামনে প্রকাশ করুন। আমরা আবারও রাস্তায় নেমে আসবো’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রাস্তায় নেমে রক্ত
দিতে হয়েছে। ভয়কে জয় করতে হয়েছে। আমাদের যে প্রতিহিংসার রাজনীতি তা তরুণদের যুগের পর
যুগ আশাহত করেছে। রাজনৈতিক কাঠামো আমাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এ ক্ষোভ
থেকেই আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়েছি।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির
মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ‘শামীম ওসমানসহ আওয়ামী লীগের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হলে
আমাদের একটা ঘোষণাপত্র দরকার। সেটাই হলো আমাদের বিপ্লবের প্রোক্লেমেশন।’
এ সময় শহীদ মিনারে
পথসভা শেষ করে তারা শহরের চাষাঢ়া পথ থেকে মিশনপাড়া এলাকা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের
মাঝে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেন। পরে তারা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের
চিটাগাংরোড এবং সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে গণসংযোগ করেন।
পথসভায় আরও উপস্থিত
ছিলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্থা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব
আব্দুল্লাহ আল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ, সহ মুখপাত্র আরেফীন
মুহাম্মাদ হিজবুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সদস্য শওকত আলী, জাতীয় নাগরিক কমিটির নারায়ণগঞ্জ
জেলার সদস্য সাবিত আল হাসান, তামিম আহমেদ।
মঙ্গলবার সকালে জুলাই বিপ্লবের ষেণাপত্রের দাবিতে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করতে হাসনাত আবদুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্থা শারমিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নারায়ণগঞ্জে আসেন। নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আদমজী সড়কে শোভাযাত্রা করেন এবং সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগাং রোডে পথসভা ও গণসংযোগ করেন। পরে সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুরে পথসভা ও গণসংযোগের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শেষ হয়।