বগুড়া বিমানবন্দর
বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৯ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:২১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ায় বিদ্যমান ছোট্ট বিমানবন্দরটিকে (শর্ট ফিল্ড টেক অফ ল্যান্ডিং পোর্ট) পূর্ণাঙ্গ অর্থাৎ যাত্রীবাহী এবং বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এজন্য শিগগিরই একটি সম্মিলিত বোর্ড গঠন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হবে।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শনে এসে এ তথ্য জানান বিমানবাহিনী প্রধান চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
বগুড়া জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে সাড়ে ৪ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়েকে ৬ হাজার ফুটে উন্নীত করা গেলেই বগুড়া বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী এবং বাণিজ্যিক বিমান ওঠানামা সম্ভব। দেড় হাজার ফুট রানওয়ের জন্য বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ৩ নভেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই গত রবিবার বিমানবাহিনী প্রধান বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন। তার সঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবিরও ছিলেন। এছাড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজাসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক এবং বেসরকারি কর্মকর্তাগণও উপস্থিত ছিলেন।
বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন এসে বিমানবাহিনী প্রধান চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এ জেলাকে অর্থনৈতিক এবং ভৌগোলিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এখানে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য আগেও অনেকবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত সরকারের অগ্রাধিকারে না থাকায় তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে এখন এটিকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। অনুমোদন এবং বরাদ্দ পেলে এই সরকারের সময়েই কাজ শুরু করা হবে। তবে কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বগুড়া জেলা প্রশাসন এবং বেবিচক সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের শাসনামলে বগুড়ায় শর্ট ফিল্ড টেক অফ ল্যান্ডিং পোর্ট বা স্টল সার্ভিস বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালে শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে বগুড়া-নওগাঁ সড়কের পাশে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এবং সংলগ্ন কাহালু উপজেলার বড়মোহর মৌজার ১০৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রানওয়ে, অফিস এবং কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করে। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলেও বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়নি। পরবর্তীতে ২০০৫ সাল নাগাদ বন্দরটিকে বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হলে সেখানে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টরস স্কুল গড়ে তোলা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, তারকা খচিত একাধিক হোটেল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু, সরকারি-বেসরকারি একাধিক মেডিকেল কলেজ রয়েছে বগুড়ায়। পাশাপাশি কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী ফাউন্ড্রি শিল্প, কাগজ, সিরামিক, পাটজাত পণ্য এবং ওষুধ উৎপাদনকারী শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার কারণে দেশে-বিদেশে বগুড়ার গুরুত্ব বাড়ছে। এ ছাড়া প্রাচীন জনপদ মহাস্থান গড়ের কারণেও এ জেলায় প্রতিবছর দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা বেড়েছে। পর্যটন-সংশ্লিষ্টদের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক বগুড়ায় আসেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সড়ক ও রেলপথে ঢাকা থেকে যাতায়াতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা; কখনও এর চেয়েও বেশি সময় লাগে। এতে ভোগান্তি কমাতে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ রাজশাহী কিংবা সৈয়দপুর থেকে বিমানে ঢাকা যাতায়াত করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে বগুড়াবাসীর পক্ষ থেকে স্থানীয় বিমানবন্দরকে সম্প্রসারণ করে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলার দাবি অনেকদিনের।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এর আগে একাধিকবার বিমানবন্দর এলাকায় রানওয়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করে। একপর্যায়ে সিভিল এভিয়েশনের সম্পত্তি শাখার তৎকালীন প্রধান ইশরাত জাহান পান্নার নেতৃত্বে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রায় ৪ বছর আগে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন করে। এতেও কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে হুমায়ুন আহম্মেদ রুবেল নামে এক যুবক ২০২৩ সালের এপ্রিলে আমরণ অনশনে বসার হুমকি দেন। তবে ওই কর্মসূচি শুরু করার আগেই তার মৃত্যু হয়।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইরুল ইসলাম বলেন, বগুড়ায় পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর চালুর পাশাপাশি বাণিজ্যিক বিমান চলাচল শুরু করা গেলে বগুড়াসহ এই অঞ্চলের কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাবেন। এতে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা গেলেই বগুড়া থেকে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল সম্ভব হবে। এজন্য মাত্র ২৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। আশা করি, শিগগির এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
বিমানবাহিনী প্রধান চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বগুড়ায় পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য বিমানবন্দরের পশ্চিমে যে গ্রামের জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব এসেছে; সেখানে খুব অল্প সংখ্যক মানুষ বসবাস করে। তাদের পুনর্বাসন করা সম্ভব।