চাঁদপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪৫ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৬ পিএম
ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম। প্রবা ফটো
চাঁদপুরের ছেলে নাঈম ইসলাম। তার চোখ ভরা স্বপ্ন ছিল স্টুডেন্ট ভিসায় কোরিয়া যাবে। সেখানে গিয়ে দিনমজুর বাবার দুঃখ লাঘব করবে। কিন্তু তার সেই সব স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে গেল। গত ১৯ জুলাই বিকালে ঢাকার বনশ্রীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। আন্দোলনরত অবস্থায় বিজিবির একটি বুলেট তার পায়ে লাগে। এতে করেই তার বাম পায়ের হাঁড়টি ভেঙে যায়। আর সেখানেই থেমে যায় নাঈমের স্বপ্ন।
নারায়ণগঞ্জ তুলারাম সরকারি ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম। নিজের পায়ে দাঁড়াতে গ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে খালার বাসায় থাকতেন। সেখানে তাদের একটি ফার্মেসিতে চাকরিও করতেন তিনি। নাঈম পড়াশোনার পাশাপাশি কোরিয়ান ভাষার কোর্সেও ভর্তি হন। এর মধ্যেই শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বর্তমানে সিএমএইচের অধীন চিকিৎসা নিচ্ছেন নাঈম। ৫ আগস্টের আগে ১৯ জুলাই থেকে তাকে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ করেছে তার পরিবার।
ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী নাঈম ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন করার সময় গত ১৯ জুলাই ঢাকার বনশ্রী এলাকায় আমার পায়ে গুলি লাগে। তখন আমার বন্ধুরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর আমাকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠায়। সেই থেকেই আমি আহত অবস্থায় জীবনযাপন করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক গুলিতে আমার সব স্বপ্ন থেমে গেছে। আমি চেয়েছিলাম স্টুডেন্ট ভিসায় কোরিয়া যেতে আর সেকারণে কোরিয়ান ভাষাও শিখেছিলাম। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। কারণ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত আছি, সুস্থ হতে অনেক দিন সময় লাগবে। আর পরিপূর্ণ সুস্থ হই কি না সেটাও আল্লাহ ভালো জানে।’
আহত শিক্ষার্থীর ভাই মোশারফ হোসেন বলেন, ‘নাঈম সিএমএইচের অধীনে চিকিৎসাধীন আছে। ৫ আগস্টের আগে ১৯ জুলাই থেকে আমরা তাকে প্রাইভেটে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করাই। সেখানে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সরকার ঘোষণা দেওয়ার পরে এখন সরকারিভাবে তার চিকিৎসা খরচ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার ভাই যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে সেজন্য ‘জুলাই ফাউন্ডেশনের কাছে আবেদন থাকবে। তারা যেন আমার ভাইকে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা দেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও পরবর্তী সরকার যে আসবে তাদেরকে যেন পাশে পাই।’
নাঈম ইসলাম চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর মোল্লা বাড়ির দিনমজুর আলমগীর হোসেনের ছেলে। পরিবারে মা-বাবাসহ আছেন আরও দুই ভাই। একমাত্র ভাইয়ের ওপর নির্ভরশীল পুরো পরিবার। তার ভাই একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছেন।