× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চরফ্যাশন-রাঙ্গাবালী ক্রসড্যাম

জলবায়ু ট্রাস্টের ৭ কোটি টাকা জলে

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০৩ এএম

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরবেস্টিন এলাকায় বনানী নদীর বাঁধ। প্রবা ফটো

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরবেস্টিন এলাকায় বনানী নদীর বাঁধ। প্রবা ফটো

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মোন্তাজ ইউনিয়নের সঙ্গে ভোলা জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য ১৪ বছর আগে ‘ক্রসড্যাম’ (আড়াআড়ি সংযোগ বাঁধ) নির্মাণের একটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে শুরুতে সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বনের প্রায় দুই হাজার গাছ কাটা হয়। কিন্তু বন বিভাগের আপত্তির মুখে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ। পরিবেশবিধ্বংসী এ প্রকল্পে জলবায়ু ট্রাস্টের প্রায় ৭ কোটি টাকা গচ্চা যায়। পরিবেশকর্মী ও স্থানীয়দের দাবি, কোনো ধরনের সমীক্ষা না করে নদীতে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেটি অপসারণ করে প্রাণ-প্রকৃতিসহ জেলেদের বাঁচানো হোক। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কলাপাড়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিলের আওতায় ২০১১-১২ অর্থবছরে চর মাইনকা-চর ইসলাম-চর মোন্তাজ ক্রসড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে ভূমি পুনরুদ্ধার শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর আগে ২০১০ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। পাউবোর বাস্তবায়নে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে মেসার্স রূপালী কনস্ট্রাকশন নামে বরিশালের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির এক-তৃতীয়াংশ কাজ শেষ হয়। এতে ব্যয় হয় পৌনে ৭ কোটি টাকা। পরে বন বিভাগের আপত্তির মুখে প্রকল্পটি সামনে না এগিয়ে অসমাপ্ত থেকে যায়। 

প্রকল্প সূত্র ও সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে পথ (রুট) দেখানো হয়েছিল; সেটি রাঙ্গাবালীর চর মোন্তাজ ইউনিয়নের চরবেষ্টিন থেকে চর বনানী হয়ে ভোলার চরফ্যাশনের চর ইসলাম থেকে চর মাইনকা পর্যন্ত। বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথের ৩ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার রাঙ্গাবালী অংশের এবং বাকি ১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার চরফ্যাশন অংশে। এর মধ্যে চর মোন্তাজ ইউনিয়নের চরবেষ্টিন থেকে চর বনানী পর্যন্ত ৬৫০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক হয়নি। চরফ্যাশনের চর মাইনকা ৭০০ মিটার বাঁধসহ ২ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কও হয়নি। 

বন বিভাগের চর মোন্তাজ রেঞ্জ কার্যালয়ের তথ্যমতে, ছইলা এবং গেওয়া প্রজাতির এসব গাছ কেটে বাঁধ নির্মাণ হয়। পুরো প্রকল্পটি শেষ করতে আরও অর্ধ লাখ গাছ কাটা পড়ত। একপর্যায় বন রক্ষা ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গাছ না কাটা ও বাঁধ নির্মাণ না করার জন্য পাউবোকে লিখিত আপত্তিপত্র দেওয়া হয়। পরে বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় পাউবো।

প্রকল্পের নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংরক্ষিত বনের ভেতরে ক্রসড্যাম এবং অ্যাপ্রোচ বাঁধ নির্মাণের জন্য ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র প্রদান প্রসঙ্গে ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল থেকে প্রধান বন সংরক্ষক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। একই বছরের ১১ ডিসেম্বর জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিলের এক চিঠি থেকে জানা যায়, প্রধান বন সংরক্ষক কর্তৃক ক্রসড্যাম ও অ্যাপ্রোচ বাঁধ নির্মাণে বন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানানো হয়। এ কারণে প্রকল্পটির কাজ অসমাপ্ত অবস্থায়ই ২০১৭ সালে বন্ধ হয়ে যায়। তবে পাউবোর দাবি, বাঁধ নির্মাণের কারণে ২০৩ একর জমি উদ্ধার হয়েছে। 

প্রকল্পের শুরুতে ভোলার সঙ্গে রাঙ্গাবালীর সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের কথা হয়েছিল। তাই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ধ্বংসের দিকে না তাকিয়ে উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু জ্যাকবের মূল টার্গেট ছিল রাঙ্গাবালী থেকে চর মোন্তাজ এবং অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট সোনারচরকে প্রশাসনিকভাবে চরফ্যাশনের সঙ্গে যুক্ত করা। জ্যাকবের এই উদ্দেশ্য হাসিল করতেই মূল প্রকল্পটিতে হাত দেওয়া হয়েছিল। আর এই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানও। 

জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে রাঙ্গাবালীতে কাজ করা বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়কারী মোহসীন তালুকদার বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে একটি খরস্রোতা নদীতে বাঁধ দেওয়ায় নদীটি নাব্যতা সংকটে হারিয়েছে অস্তিত্ব। এখন এ প্রকল্পের কাজ যদি না হয়, তাহলে বাঁধ অপসারণ করা হোক। মৃতপ্রায় নদীকে বাঁচিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা ও জেলেদের জীবিকার ব্যবস্থা করা হোক। 

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসান বলেন, সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে বলতে পারব।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা