× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কিশোরগঞ্জ

রোগী বাঁচাতে একটি জলপথের দাবি

সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:২৯ এএম

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৪২ এএম

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কে যানজট নিত্যদিনের। সোমবার তোলা

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কে যানজট নিত্যদিনের। সোমবার তোলা

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের দক্ষিণ-পূর্বদিকে যশোদল এলাকাটি। এখানেই শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে পড়তে হয় যানজটের ঝক্কি-ঝামেলায়। অসহনীয় যানজটে রোগী ও স্বজনদের পর্যুদস্ত হতে হয়। একরামপুর মোড়ে যানজট পার হতে পারলে মানুষ যেন বেঁচে যায়। শহরের কয়েকটি পয়েন্টের ভয়াবহ যানজট মেডিকেল হাসপাতালে পৌঁছাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরি করিয়ে দেয়। 

এজন্য অনেক সময় হাসপাতালে পৌঁছার আগেই রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। শহরের গাইটাল নামাপাড়ার বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, তার ভাগ্নি জামাই হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান, কেবল যানজটের কারণে। শোলাকিয়া এলাকার সাদেকুজ্জামানের একই অভিযোগ। তিনি বলেন, গেল বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় তার বোনজামাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে যানজটের কবলে পড়েন। যথাসময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় রাস্তায় মারা যান। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে শহরের সিদ্ধেশ্বীর মোড় থেকে পৌনে এক কিলোমিটার অতি সরু রাস্তা পার হয়ে তবেই মেডিকেলে ঢুকতে হয়। ১০ ফুটের এই রাস্তায় শত শত যানবাহনসহ নিকলী উপজেলা থেকেও অসংখ্য যান এতে ঢুকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি করে। ফলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরাও যানজটের শিকার হচ্ছেন। 

অন্যদিকে বর্তমানে মেডিকেল কলেজের সড়কের ফুটপাত হকাররা দখল করে নিয়েছেন। এ কারণে চলাচল আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শহরের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদী যানজট দূর করায় সহায়ক ভূমিকা নিতে পারে। এই নদীপথ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের দিগন্ত খুলে দিতে পারে। কারণ দুই বছর আগেও ভরা বর্ষায় নরসুন্দা নদী দিয়ে নৌকা চলেছে। নৌযানে চড়ে লোকজন গৌরাঙ্গ বাজার, পাগলা মসজিদ ও মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত আসা-যাওয়া করেছে। 

তাই শহরের সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ মনে করেন, নরসুন্দা নদীর শহর অংশ খনন করে পানি প্রবাহ ধরে রাখতে পারলে শুষ্ক মৌসুমেও শহরবাসী ও আশপাশ এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ জলপথে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ পাগলা মসজিদ পর্যন্ত যেতে-আসতে পারবে। 

নরসুন্দা নদীর পাড়ঘেঁষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগ। শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদী খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনলে সহজেই নৌযানে চড়ে যোগাযোগ রক্ষা সম্ভব হবে। নির্বিঘ্নে হাসপাতালে রোগী ও স্বজনরা যেতে পারবেন। 

স্থানীয় সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা বলেন, ২০১৪ সালে ১১০ কোটি টাকায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু এতে লুটপাট হওয়ায় আলোর মুখ দেখেনি। নয়ছয়ে নদী খনন ও নদীতে পানিপ্রবাহ সৃষ্টি করা যায়নি। প্রকল্পটি লুটপাটের শিকরা না হয়ে যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হতো তাহলে এই জলপথ শহরবাসীর জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিত।

খনন প্রকল্পটি সঠিক রূপে বাস্তবায়নের দাবিতে জেলাবাসী রাস্তায় নেমে এসেছিল। তারা এর বাস্তবায়নে নানা সময়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। পাশাপাশি প্রকল্প নিয়ে যে দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে, তার বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে সমাবেশ ও মানববন্ধন পালিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে একটি উচ্চ তদন্ত কমিটি গঠন করা আন্দোলনের মুখে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্টরা তদন্ত কমিটি করেই দায়িত্ব শেষ করেন। এর কোনো সুফল পায়নি কিশোরগঞ্জবাসী।

মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যাওয়ার পথ সহজতর করতে হলে নরসুন্দা নদীই বিশেষ অবলম্বন হতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহলের বিশ্বাস। তাই নদীটিকে ফের খনন করে জলপথ তৈরির আশু উদ্যোগের দিকে কিশোরগঞ্জবাসী তাকিয়ে আছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের পাগলা মসজিদ থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পার হয়ে যশোদল ইউনিয়ন নদীর ছয় কিলোমিটার অংশ খনন করা হলে সহজেই পাওয়া যাবে জলপথ। শহরের দুর্বিসহ যানজট থেকে বেঁচে যাবেন রোগী ও স্বজনরা। 

ছড়াকার সংসদের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জাহান বলেন, নরসুন্দা নদী খননের জন্য কিশোরগঞ্জবাসী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। হোসেনপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের কাওনিয়া বাঁধ খুলে দিয়ে নরসুন্দা নদী খনন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। নরসুন্দায় নাব্যতা ফিরে এলে সৈয়দ নজরুল মেডিকেলসহ শহর ও আশপাশের ১০ উপজেলার মানুষ নদীপথে যাতায়াত করতে পারবে। 

কিশোরগঞ্জ টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটির সহসভাপতি স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, অবিলম্বে প্রকল্প গ্রহণ করে নরসুন্দা খননের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজের সঙ্গে জলপথে সংযোগ স্থাপন করা এখন সময়ের দাবি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুবেল মাহমুদ বলেন, নদী খননে প্রকল্প নেওয়া হলে জেলাবাসীর অনেক সুবিধা হবে। সংশিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা