নলছিটি (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৩৬ পিএম
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৩৮ পিএম
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার অনুরাগ পৌরীপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে প্রায় ১১ লাখ টাকা আত্মসাৎসহ দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। স্কুলটির অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, উপজেলার ৪৮ নম্বর অনুরাগ গৌরীপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন খাতের টাকা মেরে দিয়েছেন। স্কুলের উন্নয়নের জন্য সরকার যে টাকা দিয়েছিল, তার পুরোটাই তিনি পকেটস্থ করেছেন। কোনো কাজই করেননি।
অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় মাইনর ক্যাটাগরির মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা, স্লিপ বরাদ্দ ৫০ হাজার, প্রাক-প্রাথমিক ১০ হাজার টাকা; ২০২০-২১ অর্থবছরে ক্ষুদ্র মেরামত ২ লাখ টাকা, স্লিপ বরাদ্দ ৫০ হাজার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ২৪ হাজার, প্রাক-প্রাথমিক ১০ হাজার টাকা; ২০২১-২২ অর্থবছরে মাইনর মেরামত ২ লাখ টাকা, রুটিন মেরামত ৮০ হাজার, স্লিপ বরাদ্দ ৫০ হাজার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ২৪ হাজার, প্রাক-প্রাথমিক ১০ হাজার টাকা; ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্লিপ বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ২৪ হাজার, প্রাক-প্রাথমিক ১০ হাজার টাকা; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্লিপ বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা ও প্রাক-প্রাথমিক ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে।
অথচ এসব টাকা দিয়ে স্কুলের ছিটেফোঁটা কাজও তিনি করেননি। বরাদ্দের পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা দিয়ে শুধু কয়েকটি বেঞ্চ রঙ করা হয়েছে। আর একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এর বাইরে কোনো কাজ হয়নি। এ ছাড়াও স্কুলের জন্য অনেক বরাদ্দ এসেছে। সেই টাকা উন্নয়নকাজে লাগানো হয়নি। স্কুলের সভাপতি লাভলুর সঙ্গে যোগসাজশে সব টাকাই প্রধান শিক্ষক পকেটে পুরেছেন।
এ ছাড়া তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন না বলে দাবি করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক মাঝেমধ্যে এলেও তাকে প্রায় সময়ই শহরেই দেখা যেত। ফলে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। তিনি স্কুলে গরহাজির থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাদানসহ সবকিছুতে ঢিলেঢালা ভাব ফুটে ওঠে।
এতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি স্কুলের সার্বিক শৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ঘটে। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে সভাপতির যোগসাজশে ওয়াশব্লক নির্মাণ করা হয়েছে। খেলার মাঠে ওয়াশব্লক নির্মাণ করায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিভাবকরা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১৮-এর জুন মাসে আমি এ স্কুলে যোগ দিয়েছি। এর পর থেকে যত সরকারি টাকা এসেছে, তা দিয়ে স্কুলের কাজ করেছি। স্কুলের শিক্ষার মান ও অবকাঠামোয় অনেক পরিবর্তন এনেছি। এ বছরের ডিসেম্বরে আমার চাকরির মেয়াদ শেষ।
আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিভাবক নানা অভিযোগ এনেছেন, তার নেপথ্য কারণ হলো বদলিজনিত একটি বিষয়। আমাকে অযথাই হয়রানি করার জন্য মিথ্যা সব অভিযোগ তোলা হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি ওই বিদ্যালয়ে এক মেয়াদে সভাপতি ছিলাম। ওই সময়ে সরকারি যে বরাদ্দ এসেছে, তা দিয়ে সঠিকভাবে কাজ করা হয়েছে। কাজের ভাউচার প্রধান শিক্ষকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।