গোপালপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৮ পিএম
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪০ পিএম
গোপালপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। প্রবা ফটো
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রংপুর মিঠাপুকুরের গোপালপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণে লিখিত আবেদন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ৭ জন শিক্ষক। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মিঠাপুকুর ইউএনওর কাছে তারা এ অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত হলেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল ইসলাম। তিনি ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে এ দায়িত্বে আছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, দায়িত্ব পেয়ে তিনি ইচ্ছেমত অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন প্রতিষ্ঠানটিকে। সম্পত্তি ভাড়া দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, টিআর-কাবিখার অর্থ লোপাট ও অতিরিক্ত ফি আদায়ের অর্থ নিজের পকেটে নেন তিনি। এছাড়াও শিক্ষকদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। এর পর থেকে তিনি শুরু করেন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। এতে শিক্ষার্থী সঙ্কটে বন্ধ হয়ে যায় কলেজ শাখাটি। ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থী।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত এ অধ্যক্ষ ইতোমধ্যে শিক্ষক ওমর ফারুক, তাজনুর ইসলাম, মিথুন চক্রবর্তী, উজ্জ্বল কুমার মন্ডল, এরশাদুল হক তুহিন, নারায়ন চন্দ্র ও আবুল খায়েরকে বিভিন্ন সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নির্যাতন করেছেন। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় এসব শিক্ষককে হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে শিক্ষকরা দাবি করেন।
শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, ‘তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, প্রতিষ্ঠানের মার্কেটের ভাড়া উত্তোলন, গাছ বিক্রি ও জমি লিজের টাকা এবং উন্নয়মূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এর প্রতিবাদ করায় আমাদেরকে নানা হয়রানি ও নির্যাতন করছেন।’ একই কথা বলেন শিক্ষক তাজনুর ইসলাম, মিথুন চক্রবর্তী, উজ্জ্বল কুমার মন্ডল, এরশাদুল হক তুহিন, নারায়ন চন্দ্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান নিম্মমুখী হয়েছে। বছরে বছরে কমছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। বর্তমানে এমন পর্যায়ে এসেছে, অনেক অভিভাবক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের ছাড়পত্র নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের ভর্তি করাচ্ছেন। অনেক আগে বন্ধ হয়েছে কলেজ শাখাটি।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি এখন টিকে থাকাই মুশকিল। শিক্ষার মান নিম্মমুখী হওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী পাঠাতেই ভাবতে হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে আজ এ অবস্থা। শিক্ষকদের উপর নির্যাতন, হামলা-মামলায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামকে অপসারণ খুবই জরুরি।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্ব পালন করছি। আমি অনেকবার অধ্যক্ষ নিয়োগের চেষ্টা করেছি, হামলা-মামলার কারণে নিয়োগ হয়নি। আমি ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে না থাকলে প্রতিষ্ঠানটি আগের জায়গায় ফেরত যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকদের একটি পক্ষ আমাকে সহযোগিতা করে না। এ কারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।’
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিকাশ চন্দ্র বর্মন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং শিক্ষকদের নির্যাতনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে তাকে অপসারণে জন্য ওই ৭ শিক্ষক রংপুর জেলা প্রশাসকের কাছেও লিখিত আবেদন করেছিলেন।