রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৪৫ এএম
ঠাকুরগাঁওয়ে একের পর এক গড়ে উঠছে অবৈধ ইটভাটা। ভাটার জন্য গাছ কাটায় হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ। এ ছাড়া কৃষিজমি থেকে মাটি কাটায় কমছে ফসল উৎপাদন। সম্প্রতি সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের লাবলু ব্রিকস নামের ইটভাটায়। প্রবা ফটো
ঠাকুরগাঁওয়ে একের পর এক গড়ে উঠছে অবৈধ ইটভাটা। এতে হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ। এ ছাড়া ইটভাটার জন্য কৃষিজমি থেকে মাটি কাটায় ফসল উৎপাদনও হুমকিতে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচ উপজেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা ১০৫টি। এর মধ্যে ৯৯টিই অবৈধ। এসব ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করার জন্য ভাটামালিকরা কৃষকের কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে সেখানে ব্যবহার করছেন। কৃষিজমিতে খননযন্ত্র বসিয়ে ১০ ফুটেরও বেশি গভীর করে চলছে মাটি কাটার উৎসব। মাটি ব্যবসায়ীরা অনেক সময় পুকুর খননের নামে মাটি কিনে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। এতে একদিকে প্রান্তিক কৃষকরা হারাচ্ছেন তাদের ফসলি জমি, অন্যদিকে চাষযোগ্য জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। জেলায় এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে এসব ফসলি জমি নষ্ট করছে। আর ফসলি জমি নষ্ট হলেও এসব বন্ধে জেলা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ জেলার সাধারণ মানুষের।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩-এর মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণে ৫-এর (১) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলার মাটি কেটে সংগ্রহ করে তা ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, যিনি এই আইনের ৫ ধারা লঙ্ঘন করবেন, তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ না থাকায় ইটভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীরা ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কাটা বন্ধ করেনি। এভাবে মাটি কাটায় কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, এভাবে অবাধে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ার কারণে কৃষিজমি ও জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ফসল উৎপাদন দিন দিন কমছে।
সদর সালন্দর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আমার ধান চাষের একটা জমি আছে এক একরের। এমবিএস নামের এক ইটভাটার মালিক আমার জমির পাশের জমিটা কেটে ভাটায় নিয়ে গেছে। এমন গর্ত করেছে যে বর্ষা মৌসুমে ভেঙে জমিটা বিলীন হয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে বিক্রি করতে হয়েছে।’
ঠাকুরগাঁও সদর আকচা ইউনিয়নে অবস্থিত এমএএস ব্রিকস নামের ইটভাটার মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা তো জোর করে জমি কেটে আনছি না। জমির মালিক মাটি বিক্রি করছেন। আমরা ন্যায্যমূল্যে কিনে নিচ্ছি।’
সালন্দর ইউনিয়নে অবস্থিত এবিএস ব্রিকসের মালিক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমার শুধু না, অনেক ইটভাটা আছে যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই। আমরা মাটি কাটি অনেক দাম দিই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষিজমির উপরিভাগের (টপ সয়েল) মাটি কেটে নেওয়ার কারণে অত্যাবশ্যকীয় জৈব উপাদানসহ মাটির পুষ্টি উপাদানের চরম ঘাটতি হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে ফসলি জমির উপরিভাগ কেটে নিলে জৈব উপাদানের পরিমাণ শূন্যে চলে আসবে। তখন রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়বে। এতে খাদ্যে পুষ্টিগুণ কমে আসবে। ইটভাটায় জমির উর্বর অংশের মাটির ব্যবহার বন্ধ করা না হলে খাদ্যে উদ্বৃত্ত ঠাকুরগাঁও জেলায় ফসল উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটতে পারে।’
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, ‘ফসলি জমিতে মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক ইটভাটার মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। মাটি কাটার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নেব।’