আদালতে নথি চুরি
আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:২৮ এএম
ফাইল ছবি
চট্টগ্রামে আদালতের বারান্দা থেকে নথি গায়েবের খবর প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। তৎপর হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একপর্যায়ে একটি ভাঙারি দোকান থেকে ৯ বস্তা নথি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই দোকানের এক কর্মচারীকে। তবে গ্রেপ্তারকৃত রাসেল জানিয়েছেন, ৯টি বস্তার মধ্যে দুটি তিনি নিয়েছিলেন। বাকি বস্তাগুলোর বিষয়ে তিনি জানেন না। পাশাপাশি পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে আদালতের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাকে আদালত ভবনের বারান্দায় থাকা ওই দুটি বস্তা সরিয়ে ফেলে দিতে বলেছিলেন বলে জানান তিনি।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, রাসেলসহ একাধিক ব্যক্তি মিলে ধাপে ধাপে বস্তাগুলো সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে। তবে এমনটি হলেও সব বস্তা একই দোকানে নিয়ে বিক্রি করার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নথি গায়েবের ঘটনার শুরু থেকেই এটিকে সাধারণ চুরি হিসেবে মানতে নারাজ আইনজীবীদের অনেকে। তারা বলছেন, মূল নথি না থাকলে বিচারে বিবাদী পক্ষ সুবিধা পাবে। আর গায়েব হওয়া নথিগুলো হত্যা, মাদকসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগের মামলার নথি। কাজেই বিশেষ কোনো মামলার নথি সরানোর উদ্দেশ্যে এমনটা করা হয়েছে। একটি বা কয়েকটি নথি সরালে বিষয়টি ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে একসঙ্গে ১ হাজার ৯১১টি নথি সরিয়ে ফেলা হয়ে থাকতে পারে।
তবে বিষয়টি নিয়ে এমনটা ভাবছে না পুলিশ। পুরো ব্যাপারটা আদালতের সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও দায়সারা আচরণ বলে মনে করছেন তারা।
চট্টগ্রাম পুলিশের একজন উপপরিদর্শক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আদালতের বারান্দায় নথিগুলো পড়ে ছিল। নথি হারানোর পর আদালতের পাঁচটি ক্যামেরার ২০ দিনের ফুটেজ আমাদের দেখতে হয়েছে। এর মধ্যে রাসেলের ব্যাপারটা শনাক্ত করার পর সব ফুটেজ আর দেখা হয়নি। রাসেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কোতোয়ালির সতীশ বাবু লেনের মফিজের ভাঙারি দোকান থেকে ৯টি বস্তা ভর্তি কেইস ডকেট উদ্ধার করা হয়।’
তিনি বলেন, এখানে সব নথি আছে বলে ধারণা করছি। এগুলো হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক হইচই হয়েছে। আমার কথা হলো, এত গুরুত্বপূর্ণ নথি এভাবে খোলা বারান্দায় কেন থাকবে। পুরো ব্যাপারটায় ব্যবস্থাপনার একটা অবহেলা চোখে পড়েছে। যেহেতু আদালতের বিষয়, চাইলে অনেক কিছু বলাও যাচ্ছে না। তবে রাসেল বস্তা নিয়ে নামছে, এটা সিসিটিভিতে দেখা গেছে স্পষ্ট।’
রাসেল আদালতের নারী ও শিশু বিল্ডিং-লাগোয়া গলির ভেতরে থাকা চায়ের দোকানে কাজ করতেন। চায়ের দোকানটি নাছির নামের একজনের। নাছিরের দোকানের আগে নতুন আদালত ভবনের তৃতীয় তলার বামপাশে থাকা একটি চায়ের দোকানে তিনি কাজ করতেন। এ দোকানটি চালান কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তি। কুদ্দুসের চায়ের দোকানের অদূরেই চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অফিস।
পুলিশকে রাসেল জানান, কেইস ডকেট ভর্তি ৯টি বস্তার মধ্যে তিনি শুধু দুটি নিয়েছেন। এ দুটি বস্তা মাথায় করে আদালত ভবন থেকে নামিয়ে কোতোয়ালির সতীশ বাবু লেন এলাকার মফিজের ভাঙারির দোকানে নিয়ে যান। ১৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে মোট ৮১০ টাকা পান। এর মধ্যে একটি বস্তা ৪৪০ টাকা এবং অপরটি ৩৭০ টাকায় বিক্রি করেন। বিক্রি করা টাকা তিনি খরচ করে ফেলেছেন। বাকি কেইস ডকেট ভর্তি বস্তা কারা ভাঙারির দোকানে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি তা জানেন না।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম আদালতের বিভিন্ন মামলার ১ হাজার ৯১১টি নথির খোঁজ না পাওয়ায় গত ৫ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মফিজুল হক ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার বস্তাবন্দি অবস্থায় নথিগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
উদ্ধারকৃত ৯টি বস্তায় ১ এখানে ৯১১টি নথির সব আছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক কামরুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বস্তাগুলো এখনও খুলে দেখা হয়নি। উদ্ধারের পর চুরির একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ৯ বস্তা উল্লেখ করা হয়েছে। ৯টি বস্তাই আমরা উদ্ধার করেছি। কাজেই আশা করছি, সব নথি উদ্ধার করা গেছে। এগুলো এখনও আমাদের কাছে জব্দ আছে। আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের অনুমতিক্রমে হস্তান্তর করা হবে। তখন সংখ্যার বিষয়টা বলা যাবে।’
এই ঘটনায় রাসেল ছাড়াও অন্য কারা সম্পৃক্ত সেটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রাসেল শনাক্ত ও গ্রেপ্তার হয়েছে। আরও কেউ থাকলে তদন্তে উঠে আসবে।’