লালমনিরহাট সীমান্ত
নিয়ন দুলাল, লালমনিরহাট
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:০১ এএম
লালমনিরহাটের সীমান্ত এলাকা। প্রবা ফটো
আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এতে ক্ষুব্ধ লালমনিরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। আছে আতঙ্কও। তবে সীমান্ত রক্ষায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ী শূন্যরেখার উভয় পাশে দেড় শ’ গজের মধ্যে কোনো দেশ কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না। কিন্তু বিএসএফ এসব আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লালমনিরহাট সীমান্তের শূন্যরেখায় একের পর এক কাঁটাতারের বেড়া, লাইট পোস্ট ও ক্যামেরা সংবলিত যন্ত্রাংশ স্থাপন করছে। ফলে উত্তেজনা বিরাজ করছে এসব সীমান্ত এলাকায়। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।
বিজিবি ও স্থানীয়রা জানায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রধান পিলার ৮২৯ নম্বরের ২ নম্বর উপ-পিলার পাটগ্রাম সদর ইউনিয়নের গাটিয়ারভিটা সীমান্তের শূন্যরেখার ৫০ গজ অভ্যন্তরে গত মঙ্গলবার রাতে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও যন্ত্র স্থাপন করে বিএসএফ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার বিএসএফের ৯৮ ব্যাটালিয়নের ফুলকাডাবরী ক্যাম্পের সদস্যরা সে দেশের নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়ে এই আগ্রাসী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে।
পরদিন চাষাবাদ করতে গিয়ে কৃষকরা বিষয়টি দেখতে পেয়ে বিজিবিকে খবর দেয়। বিজিবি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএসফ-কে দ্রুত বৈদ্যুতিক খুঁটি ও যন্ত্র সরিয়ে নিতে বলে। একইসাথে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ওই সীমান্ত পয়েন্টে বুধবার সন্ধ্যায় বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী বৈঠকে ভারতের পক্ষে ইন্সপেক্টর জিতেন্দ্র সিংয়ের নেতৃত্বে ৬ জন বিএসএফ কর্মকর্তা অংশ নেন। বাংলাদেশের পক্ষে ৬ জনের নেতৃত্ব দেন সুবেদার মাহবুবর রহমান।
বৈঠকে কোনোকিছু না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে শূন্যরেখার মধ্যে খুঁটি ও যন্ত্র স্থাপন করার প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। একইসাথে বিএসএফকে শূন্যরেখার মধ্যে কোনো কিছু নির্মাণ বা স্থাপনে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। বিজিবির পক্ষ থেকে নির্মিত খুটি ও যন্ত্র সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানালে স্থাপিত যন্ত্র ও খুঁটি সরিয়ে নেয় বিএসএফ।
দহগ্রাম সীমান্তের মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরশ আলী বলেন, ‘বিএসএফ কোনো আইনকানুন মানে না। শূন্যরেখায় কী করে তারা কাঁটাতারের বেড়া দেয়?’
একই এলাকার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বিএসএফের আগ্রাসী আচরণের কারণে সীমান্তে চাষাবাদ করতে হিমশিম খেতে হয় কৃষকদের। সুযোগ পেলেই তারা চড়াও হয়, মারধর করে আমাদের।’
পাটগ্রাম সদর ইউনিয়নের আয়নুল হক বলেন, ‘সীমান্তে বিএসএফ সবসময়ই আগ্রাসী মনোভাবের। তাদের বাধা দিলেই গুলি ছোড়ে, ধরে নিয়ে যায়।’
একই এলাকার বাসিন্দা নুর আলম বলেন, ‘মাঝে মাঝে নারীদেরকেও নির্যাতন করে ভারতীয় বাহিনী। ওরা কারণে-অকারণে গুলি করে।’
বিএসএফের এসব বেআইনি কর্মকান্ডে বরাবরের মতোই প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। প্রতিটি পতাকা বৈঠকে সীমান্ত আইন মেনে চলা এবং নির্মিত স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলছে বিজিবি। বর্তমানে বিজিবি এসব স্থানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীটির কর্মকর্তারা।
বিজিবি’র ৫১ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক আমীর খসরু বলেন, ‘বিএসএফ সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করলে আমরা সাথে সাথেই প্রতিবাদ জানিয়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানাই।’
৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সেলিম আল দীন বলেন, ‘কোনো প্রকার সমন্বয় বা আলোচনা ছাড়া সীমান্তের দেড়শ’ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করলে আমরা জোর প্রতিবাদ করি। প্রয়োজনে স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয় বিএসএফ-কে। সীমান্ত রক্ষায় আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। উত্তেজনাপূর্ণ এলাকায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আমাদের সদস্যরা।’