অবিদীয় মার্ডি হত্যাকাণ্ড
গাইবান্ধা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:১৮ পিএম
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের এসিল্যান্ড ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নেতা অবিদীয় মার্ডি হত্যার বিচারকাজ ১০ বছরেও শেষ হয়নি। দীর্ঘ সময়েও বিচার না পেয়ে তার স্বজনরা হতাশায় ভুগছেন। শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে দ্রুত বিচারের দাবিতে ‘অবিদীয় মার্ডি স্মৃতি রক্ষা কমিটি, গোবিন্দগঞ্জ’-এর উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গাইবান্ধা শহরের গানাসাস মার্কেটের সামনে আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাসকে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি ওয়াজিউর রহমান রাফেল, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, আদিবাসী নেতা বার্ণাবাস টুডু, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুরমু ও মানবাধিকার কর্মী অঞ্জলী রানী দেবীসহ অনেকে।
সমাবেশ শুরুর আগে গাইবান্ধা শহরের প্রধান সড়কে একটি মিছিল বের করা হয়। পরে শহীদ অবিদীয় মার্ডির প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এতে বক্তারা ২০১৪ সালের এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দেরি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, অবিদীয় মার্ডিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের এতে সরাসরি মদদ ছিল। তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও এখনও পর্যন্ত বিচার শেষ হয়নি।
বক্তারা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ১০ বছর ধরে ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আদালতের দ্বারে ঘুরছেন অবিদীয় মার্ডির পরিবার।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি নওগাঁর ধামুইরহাট থেকে মোটরসাইকেলে গোবিন্দগঞ্জ অফিসে যাওয়ার পথে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম আখ খামারের কাটা-ফাসিতলা সড়কে অবিদীয় মার্ডির মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে আখ খামারের ভেতরে নিয়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল নিহতের বড় ভাই ফাদার স্যামসন মার্ডি গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই হত্যা নিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এখনও বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি।
সমাবেশে বক্তারা এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচারের দাবি জানান। তারা বলেন, দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার বিলম্ব সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে। অবিদীয় মার্ডি হত্যার সঠিক বিচার না হলে ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা হারাবে সাধারণ মানুষ।
গাইবান্ধার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের এই নেতার হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তার পরিবার ও স্থানীয় অধিকারকর্মীরা। তাদের দাবি, অবিদীয় মার্ডির হত্যার সঠিক তদন্ত ও দ্রুত বিচার কার্যক্রম যেন দ্রুত শুরু করা হয়।