নিহত এসআই শফিকুলের মায়ের আহাজারি
দুর্গাপুর (নেত্রকোণা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:০৩ পিএম
‘বিচার চাই গো, আমি আর কিছু চাই না গো, আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।’ বুক চাপড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব বলতে থাকেন জামালপুরের নেত্রকোণার দুর্গাপুরে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলামের বৃদ্ধা মা ফাতেমা খাতুন।
কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন এসআই শফিকুল ইসলাম। নিহত এই পুলিশ সদস্য জামালপুর পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার নেত্রকোণার দুর্গাপুরে শফিকুল ইসলাম তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন এবং পরদিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ময়মনসিংহের ভাড়া বাসায় ওঠার কথা ছিল।
নিহত এসআই শফিকুল ইসলামের বাবা রফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা ৬ জনকে আসামি করে দুর্গাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনও কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাজার করার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হওয়ার পর দুর্গাপুর পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকায় পান মহালের গলিতে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপালে তিনি গুরুতর আহত হন। এ সময় তার ডান পায়ের গোড়ালির নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে ওইদিন রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। পরদিন দুপুরে উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে তার লাশ পৌঁছলে স্বজনদের মাঝে শুরু হয় শোকের মাতম। বিকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন হয়।
নিহত শফিকুলের ছেলে রাফিউল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার আমাকে নিয়ে ময়মনসিংহ যাওয়ার কথা ছিল আব্বুর, কিন্তু আব্বু ময়মনসিংহ গেল ঠিকই ফিরল আমাকে এতিম করে।’
নিহত পুলিশের এসআই শফিকুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন বলেন, একজন নিয়মিত পুলিশ সদস্য হওয়ায় হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমার স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন সোর্স, সিসিটিভি ফুটেজ ও আধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও এখনও কেউ গ্রেপ্তার হলো না। আমরা খুবই হতাশায় আছি।
স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কখনও এ পরিবারের এমন আচরণ দেখিনি যে তাদের শত্রু থাকবে এলাকায়। আমরা কল্পনা করতে পারিনি এমন একটি ভালো ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে। আমরা এ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
নোয়াগাঁও গ্রামের রমজান আলী বলেন, শফিকুলের অত্র এলাকার কারও সঙ্গে কেনোদিন মনোমালিন্য হয়নি। সে অত্যন্ত সৎ ও ভালো ছেলে ছিল। আমরা চাই এ খুনের সঠিক তথ্য বের হোক।
নিহত পুলিশ শফিকুলের শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, সে যখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল তখন আমি তাকে পড়িয়েছি। তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
নোয়াগাঁও এলাকার শামছুল আলম খান বলেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে এভাবে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে সেখানে তো সাধারণ মানুষের কোনো নিরাপত্তাই নেই।
ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল কালাম আযাদ শুক্রবার নিহতের বাড়ি যান এবং নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে জানাজায় অংশ নেন। এ সময় তিনি বলেন, শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হবে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।