অরক্ষিত রেল ক্রসিং
চম্পক কুমার, জয়পুরহাট
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০৫ এএম
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৭ পিএম
জয়পুরহাট সদর উপজেলার পালপাড়া এলাকার অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং। প্রবা ফটো
ঘটনাটি ২০০৬ সালের। ওই বছরের ১১ জুলাই সকাল ১০টার কিছু সময় পর অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ঘটে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ট্রেন-বাসের দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় ৩২ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও কয়েকজন প্রাণ হারায়। এতে ওই দুর্ঘটনায় মোট ৪০ বাসযাত্রী প্রাণ হারায়। এমন দুর্ঘটনা ঘটেছিল জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের আমুট্ট লেভেল ক্রসিংয়ে।
এরপরও ১০ বছর অরক্ষিত থাকে ওই লেভেল ক্রসিং। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের দিকে সেখানে প্রতিবন্ধকতার গেট নির্মাণ করা হয়। নিয়োগ দেওয়া হয় লোকবল।
এমনিভাবে প্রায় সময়ই কোনো না কোনো অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এতে যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষের নজরে এলেও উদাসীনতায় থাকা হচ্ছে দিনের পর দিন। শুধু নানা সতর্কবার্তা লিখে দেওয়া রয়েছে। কোথাও সেই সতর্কবার্তাও নেই।
রেলওয়ের তথ্য বলছে, জয়পুরহাট জেলার আওতায় আক্কেলপুরের ছাতিয়ানগ্রাম থেকে পাঁচবিবির আটাপাড়া পর্যন্ত পর্যন্ত প্রায় ৪৬ দশমিক ২ কিলোমিটার রেলপথের ওপর দিয়ে অনেক সড়ক রয়েছে। এসব সড়কের ওপর রেলের অনুমোদিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে ১৪টি। এর মধ্যে ৯টি লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধকতা ও লোকবল রয়েছে। আর ৫টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত রয়েছে। সেগুলোতে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
অনুমোদন ছাড়া আরও ৬টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। রেলওয়ের এই তথ্য ছাড়া আরও কিছু এলাকায় লেভেল ক্রসিং রয়েছে। সেগুলো স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও কর্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্ব পায়নি।
পাঁচবিবির খাসবাগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা হিতেন মাহাতো বলেন, এই খাসবাগুড়ি রেলগেট দিয়ে চলাচলের সময় মানুষ ট্রেন দেখতে পায় না। দুপাশে গাছপালায় ভরা। ট্রেন কাছে থাকলেও কোনো গাড়ির চালক দেখতে পাবেন না। এ অবস্থায় মানুষ দীর্ঘদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে চলাচল করছে।
সদরের পালপাড়া নামক লেভেল ক্রসিং দিয়ে যাত্রী নিয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যান পার করেন চালক বাবুল শেখ। তিনি বলেন, ‘ট্রেন যখন আসে, মানুষ চলাচলের সময় তাৎক্ষণিক দেখতে পায় না। আবার ট্রেনের হুইসেল শুনতেও পায় না। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। এই রেললাইন ক্রসিং গেটে পরপর তিনটি মেসি ট্রাক্টরের সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কার ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া প্রতিনিয়ত এদিক দিয়ে পারাপারের সময় এদিক-ওদিক তাকিয়ে পার হতে হয়। আমরা এখানে একটি গেট ও গেটম্যান চাই।’
শাহাপুর রেলগেট এলাকায় সাইকেল মেকানিকের দোকান করেন আলাউদ্দিন সরদার। অনেক সময় ট্রেনের শব্দ বড় গাড়িগুলোর শব্দের কারণে ওই গাড়ির চালকরা শুনতে পান না। তখন চিৎকার করে ওই গাড়ির চালকদের আটকাতে বলেন তিনি। সব সময় এটি করা সম্ভব নয় বলে ঘটে দুর্ঘটনা। এমন কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তা পাকা হওয়ার কারণে এই রাস্তা দিয়ে অনেক মানুষ চলাচল করে। দ্রুত এখানে রেলগেট ও গেটম্যান দরকার।
সাখাওয়াত হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, শুধু শাহাপুর রেলগেটই নয়, এর উত্তরদিকে উড়িরপুল নামের আরেকটি রেলগেটও আছে। ওই পথ দিয়েও মানুষ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা নিয়ে চলাচল করে। তা ছাড়া জেলায় আরও কিছু কিছু এলাকায় এমন অনেক রেলগেট রয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে কোনো রেলগেট কিংবা গেটম্যান নেই। এসব গেট নির্মাণ জরুরি।
এ ব্যাপারে রেলওয়ের হিলি প্রকৌশল বিভাগের টাইম কিপার আরাফাত রহমান বলেন, ‘অনুমোদন রয়েছে কিন্তু প্রতিবন্ধকতা নেই বা গেটম্যান নেই এসব জায়গায় সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে অনুমোদন হয়নি এমন লেভেল ক্রসিং অনুমোদন করা যেতে পারে। আর স্থানীয়ভাবে লোকজন ও যানবাহন চলাচলের ওপর নির্ভর করে গেট ও গেটম্যানের অনুমোদন আসে।’