× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিহঙ্গ

শিকারি অতিথি পাখি মাছমুরাল

এহসানুল হক সুমন, রংপুর

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৩৬ এএম

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১২ পিএম

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর তিস্তা নদীর চরে মাছ ধরে উড়ে যাচ্ছে মাছমুরাল। ছবি: তুহিন ওয়াদুদ

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর তিস্তা নদীর চরে মাছ ধরে উড়ে যাচ্ছে মাছমুরাল। ছবি: তুহিন ওয়াদুদ

উজানের ঢল নেই তিস্তায়। পানি শুকিয়ে নালায় পরিণত নদী। কোথাও হাঁটু, কোথাও এক বুক জল। স্বচ্ছ পানির নিচে চিকচিক করে সাদা বালু। এর মাঝে কোথাও ছুটে বেড়াচ্ছে মাছ। নদীর ওপর আকাশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে একটি মাছমুরাল। এর মাঝে ছোঁ মেরে পায়ের ধারাল নখে গেঁথে মাছ শিকার করে উড়ে যাচ্ছে মাছমুরালটি। এমন রাজকীয় ভঙিতে মাছ শিকারের রোমাঞ্চকর দৃশ্য নদীপাড়ের বাসিন্দা ও পাখিপ্রেমীদের মন কাড়ছে। পানিশূন্য তিস্তায় ক্ষণিকের জন্য হলেও উত্তেজনা তৈরি করে মাছমুরালের এমন বিচরণ। 

পৌষের শুরু থেকে রংপুরের তিস্তা নদীতে আসছে নানা পরিযায়ী পাখি। শীতপ্রধান দেশে শীতের তীব্রতা বাড়ায় শত শত মাইল উড়ে জীবন-জীবিকার সন্ধানে ছুটে আসছে তারা। তাই তিস্তায় এখন পাখ-পাখালির মেলা বসেছে। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নদী বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন ওয়াদুদ চলতি শীতে তিস্তা নদীর ১১৫ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণের ফাঁকে ফাঁকে তিনি তিস্তার বিভিন্ন চরে নেমে পাখিদের ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন। তিস্তার চরে পায়ে মাছ নিয়ে ডানা মেলে মাছমুরালের উড়ে চলার একাধিক দৃশ্য তিনি ক্যামেরাবন্দি করেছেন।

ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘শীত মৌসুমে খাবার ও নিরাপদ আবাসের জন্য পরিযায়ী পাখিরা তিস্তায় আসে। এর মধ্যে মাছমুরালকে প্রতিবছরই তিস্তা দেখা যায়। গত কয়েক দিন আগে গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর এলাকায় মাছমুরাল পাখিটিকে দেখতে পাই। দ্রুত ক্যামেরা বের করে পাখিটির দুই ডানা প্রসারিত করে মাছ নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য তুলতে পেরেছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ছবি প্রকাশ করলে পাখিপ্রেমীদের মন কেড়েছে। যদি তিস্তায় পাখি শিকার বন্ধ করে নিরাপদ আবাস গড়ে তোলা যায়, তাহলে আরও ব্যাপক পরিযায়ী পাখি দেখার সুযোগ হবে পাখিপ্রেমীদের।’ 

জানা যায়, মাছমুরাল ইংরেজি অসপ্রে ও বাংলায় উখস নামে পরিচিত। একে প্যান্ডিয়নের সামদ্রিক ঈগলও বলে। পাখিটি অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ, মরু ও মেরু অঞ্চল ছাড়াও সমগ্র পৃথিবীতে দেখা যায়। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সে কারণে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) মাছমুরালকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত পাখি বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। কানাডার নোভাস্কশিয়া প্রদেশের প্রাদেশিক পাখি হিসেবে মাছমুরালকে ঘোষণা করা হয়। 

এদের দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত প্রখর হয়। তাদের ধারাল নখযুক্ত শক্তিশালী আঙুল ও পা রয়েছে। মাংস ছেঁড়ার জন্য রয়েছে বড়শির মতো বাঁকানো ঠোঁট। মাছ শিকারের পর তারা মাছটির মাথা দেহ থেকে আলাদা করে ফেলে। মাছমুরালের দৈর্ঘ্যে ৫৬ সেন্টিমিটার এবং ওজনে প্রায় দুই কেজি হয়। এরা নিজেদের চেয়ে বেশি ওজনের শিকার করতে সক্ষম। এ পাখির মাথা, ঘাড় ও গলা ধূসর। পিঠ গাঢ় বাদামি ও বুক লালচে বাদামি। লেজ ও পেট শুভ্র বর্ণের। লেগের অগ্রভাগে কালো বন্ধনি রয়েছে। মাছমুরালের চোখ হলদে বর্ণের। মার্চ-এপ্রিল মাস মাছমুরালদের প্রজনন মৌসুম। এ সময় সাইবেরিয়া ও তিব্বত হ্রদসংলগ্ন উঁচু গাছে বাসা তৈরি করে দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে। মেয়ে মাছমুরাল এতে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। 

অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বিশ্বের আর সব মহাদেশেই মাছমুরালের দেখা মেলে। বহেরি বাজের পর এরাই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিস্তৃত শিকারি পাখি। স্বাদু পানির লেক বা নদীর কাছে বাসা করলেও কিছু উপকূলীয় অঞ্চলেও এদের বাসা করতে দেখা যায়। মূলত উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রজনন করতে দেখা যায় এদের। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের পাখিগুলো পরিযায়ন করলেও অস্ট্রেলিয়ার মাছমুরালদের পরিযায়নের কোনো রেকর্ড নেই। আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকাসহ এশিয়ায় তাদের বৈশ্বিক বিচরণ রয়েছে। মার্চ-এপ্রিল মাস মাছমুরালদের প্রজননের সময়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা