মৌলভীবাজার প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:২৮ পিএম
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৩ পিএম
সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী লোকজ গান, নৃত্য ও আকর্ষণীয় মেলার মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উদ্বোধন হয়েছে হারমোনি ফেস্টিভ্যাল।
দেশের পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৮ নম্বর কালীঘাট ইউনিয়নের চা-বাগান ঘেরা কাকিয়াছড়া চা-বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকালে উদ্বোধন করা হয় এবারের উৎসব।
দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এ উৎসবে চায়ের রাজধানী ও পর্যটন নগরী খ্যাত শ্রীমঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকার ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ২৬টি সম্প্রদায়ের মানুষ এতে অংশ নিচ্ছে। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (গ্রেড-১) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবেরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান।
উৎসবে স্থানীয় বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন উপকরণের প্রদর্শনীসহ সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু সব খাবারের ৫০টি স্টল বসেছে। কাল রবিবার রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। এতে নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী খাসিয়া, গারো, মণিপুরি, ত্রিপুরা, সবর, খাড়িয়া, রিকিয়াসন, বাড়াইক, কন্দ, রাজবল্বব, ভূঁইয়া, সাঁওতাল, ওঁরাও, গড়াইত, মুন্ডা, কুর্মী, ভুমিজ, বুনারজি, লোহার, গঞ্জু, কড়াসহ শ্রীমঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ অংশ নিচ্ছে। তিন দিনব্যাপী উৎসবে সবর জনগোষ্ঠী ‘পত্র সওরা নৃত্য’ ও ‘চড়ইয়া নৃত্য’, খাড়িয়া জনগোষ্ঠী ‘খাড়ি নৃত্য’, রিকিয়াসন জনগোষ্ঠী ‘লাঠি নৃত্য’, বাড়াইক জনগোষ্ঠী ‘ঝুমুর নৃত্য’, কন্দ জনগোষ্ঠী ‘কুই নৃত্য’, রাজবল্বব জনগোষ্ঠী ‘উড়িয়া নৃত্য, ভূঁইয়া জনগোষ্ঠী ‘ভূঁইয়া গীত’, সাঁওতাল জনগোষ্ঠী ‘লাগড়ে নৃত্য, ওঁরাও জনগোষ্ঠী ‘ওঁরাও নৃত্য’, গড়াইত জনগোষ্ঠী ‘গড়াইত নৃত্য’, মুন্ডা জনগোষ্ঠী ‘মুন্ডারি নৃত্য’, কুর্মী জনগোষ্ঠী ‘কুরমালি নৃত্য’, ভূমিজ জনগোষ্ঠী ‘ভূমিজ নৃত্য’, বুনারজি জনগোষ্ঠী ‘উড়িয়া ভজন’, লোহার জনগোষ্ঠী ‘ভুজপুরি রামায়ণ কীর্তন’, গঞ্জু জনগোষ্ঠী ‘গঞ্জু নৃত্য’, কড়া জনগোষ্ঠী ‘কড়া নৃত্য’, খাসিয়া জনগোষ্ঠী ‘ঐতিহ্যবাহী পোশাক ডিয়া কেরছা ও মালা পরিধানের মাধ্যমে নাচ-গান’, ‘তীর-ধনুক প্রতিযোগিতা’, ‘সিয়াট বাটু’ (গুলতি দিয়ে খেলা), ‘কিউ থেনেং’ (তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার প্রতিযোগিতা), ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ‘কাথারক নৃত্য’, ‘বেসু নৃত্য’, ‘জুম নৃত্য’, ‘গ্যারি পুজা’, ‘ক্যার পুজা’, ‘নক থাপেং মা পুজা’, ‘কাদং’ (রনপা), গারো জনগোষ্ঠী ‘জুম নৃত্য’, ‘আমোয়দেব’ (পুজা), ‘গিক্কা নাচ’ (মল্লযুদ্ধ), ‘চাওয়ারি সিক্কা’ (জামাই-বউ নির্বাচন), ‘চাম্বিল নাচ’ (বানর নৃত্য), ‘মান্দি নাচ’, ‘রে রে গান’, ‘সেরেনজিং’ (প্রেম কাহিনীর গান), মণিপুরি জনগোষ্ঠী ‘রাসলীলা নৃত্য’, ‘পুং চলোম নৃত্য’ (ঢোল নৃত্য), ‘রাধাকৃষ্ণ নৃত্য’ এবং সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া খাসিয়া জনগোষ্ঠীর পান নিয়ে লাইভ পরিবেশনা, ত্রিপুরাদের কোমর তাঁত, মণিপুরিদের লাইভ তাঁত, চা ও রাবার প্রসেসিং, হোমস্টে, কুমারদের লাইভ মাটির জিনিসপত্র প্রস্তুত করাসহ বিভিন্ন ইভেন্ট থাকবে।
শুক্রবার সকাল থেকেই উৎসবে আসতে থাকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজন। পায়ে আলতা, বাহারি রঙের শাড়ি, খোঁপায় ফুল পরিধান করে নারীরা নাচ ও গানে মুখর করে তোলেন চারপাশ। সঙ্গে ঢোল-করতাল-মাদল বাজিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে অংশ নেন পুরুষরাও। প্রথম দিনে পাঁচটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরেন এই উৎসবে।
আয়োজকরা জানান, শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য, যেখানে টি ট্যুরিজম, ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুরিজম, ব্যাক ওয়াটার ট্যুরিজম, এথনো ট্যুরিজমসহ বিভিন্ন ধরনের পর্যটন বিকাশের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে আগত ইন বাউন্ড ট্যুরিস্টদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিবছর শ্রীমঙ্গল এবং সংলগ্ন এলাকায় ভ্রমণ করে থাকেন। হারমোনি ফেস্টিভ্যাল এ অঞ্চলে বিদ্যমান ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনাচরের টেকসই রূপদান, ট্যুরিস্টদের অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের নতুন ট্যুরিজম প্রডাক্ট উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।