ওসি পরিচয়ে ‘অপহরণ’
দিনাজপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৮ পিএম
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৯ পিএম
পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিচয় দিয়ে বাবা-ছেলেকে ‘অপহরণ’ করে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক ও তার সহযোগী মো.আপেলকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিক্ষুদ্ধ জনতা।
এ ঘটনায় শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে অন্যের পরিচয়ে অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগে দিনাজপুর কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী দিনাজপুর সদর উপজেলার ভাটিনা ঠাকুরবাড়ী গ্রামের শ্রী চৈতু বর্মন।
মামলায় ছাত্রদল নেতা আব্দুর রাজ্জাকসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ২/৩ জনকে।
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা আব্দুর রাজ্জাক দিনাজপুর সদর উপজেলার নহনা গ্রামের মো. রুস্তম আলীর ছেলে। মামলার এজাহারে উল্লেখিত অন্যান্য আসামিরা হলেন- মো. শাহাদাত হোসেনের ছেলে মো. আপেল, মো. আব্দুস সাত্তারের ছেলে মো. শাহীনুর ইসলাম, মো. আপনের ছেলে মো. শান্ত, মো. আক্তারুল, শ্রী উজ্জ্বল রায়, শ্রী তাপস রায় এবং শ্রী মহেশ চন্দ্র রায়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের ভাটিনা ঠাকুরবাড়ি গ্রামের চাকলাদার পুকুর পাড় এলাকায় গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটে।
শ্রী চৈতু বর্মন জানান, তার ছেলে ইমন চন্দ্র বর্মণ একই গ্রামের মিতু রানী রায়ের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করার পর টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিলেন। এই ঘটনার জেরে গত ৭ জানুয়ারি কোতয়ালি থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আব্দুর রাজ্জাকসহ তার লোকজন মাইক্রোবাস নিয়ে রাত পৌনে ১২টয় দিনাজপুর সদরের ৪ নম্বর শেখপুরা ইউনিয়নের ভাটিনা ঠাকুরবাড়ি গ্রামে তার বাড়ি যায়। আব্দুর রাজ্জাক নিজেকে কোতোয়ালি থানার ওসি পরিচয় দিয়ে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে বের করেন।
এ সময় চৈতু বর্মন তার পরিবারের লোকজনকে ডাকতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাকসহ তার লোকজন তাকে জোরপূর্বক সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তোলেন। জানতে চান ছেলে ইমন কোথায় আছে। তার ঠিকানা জানার পর বাদীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে টাঙ্গাইলে নিয়ে যান।
টাঙ্গাইল থেকে ছেলে ইমনসহ বাবা চৈতুকে ৮ জানুয়ারি রাত ১০টায় পুনরায় দিনাজপুর নিয়ে এসে শেখপুড়া ইউনিয়নের মাধবপুর গোয়ালপাড়ার শ্রী মহেশ চন্দ্র রায়ের বাসায় আটকে রাখে এবং শারীরিক নির্যাতন চালায়। এ সময় বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তারা। ছেলে ও নিজের জীবন রক্ষার্থে চৈতু তাদের টাকা দিতে সম্মতি জানান। আব্দুর রাজ্জাক ও সঙ্গীয় লোকজন টাকা না দিলে বা কাউকে জানালে বিভিন্ন মামলাসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ওই রাতে ছেড়ে দেয়।
৯ জানুয়ারি রাত ৮টায় আব্দুর রাজ্জাক, মো. আপেলসহ তাদের সঙ্গীদের নিয়ে চৈতু বর্মনের বাড়ি গিয়ে বাবা ও ছেলে ডেকে ভাটিনা ঠাকুরবাড়ি গ্রামের চাকলাদার পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। আব্দুর রাজ্জাক নিজেকে পূণরায় ওসির পরিচয় দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন।
এ সময় অত্র এলাকার লোকজন এগিয়ে এলে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আব্দুর রাজ্জাক ও আপেল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের দুজনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিউর রহমান জানান, ‘জাতীয় জরুরি সেবায় কল পেয়ে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে বিক্ষুব্ধ জনতার কাছ থেকে আব্দুর রাজ্জাক ও সঙ্গীকে থানায় নিয়ে আসে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়েছে। আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের ধরত অভিযান অব্যাহত আছে।