লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৩৫ পিএম
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৫ পিএম
লক্ষ্মীপুরে ওয়ে হাউজিং কোম্পানি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নির্মাণ করছে বহুতল ভবন। এতে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দেবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর চলাচলে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। ভবনের পাশের দুটি দোকান ও একটি কবরস্থান ভেঙে গেছে।
আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবন ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ঘটনায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সহস্রাধিক পরিবারের গৃহিণীরা রান্নাবান্না নিয়ে মহাসংকটে।
খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রকৌশলী জুলফিকার জুয়েল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর আগে গত বুধবার রাত ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার শাঁখারি পাড়া সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পৌর কর্তৃপক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, ভেঙে যাওয়া দোকানগুলোর পেছনে একটি পুকুর আছে। ভবন নির্মাণের জন্য অনিয়ন্ত্রিত পাইলিং করায় মাটির তলদেশে পানির স্তর সৃষ্টি হয়। ভেক্যু দিয়ে সম্প্রতি প্রায় ৩০ ফুট মাটি খুঁড়ে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছিল হাউজিং কোম্পানিটি।
নির্মাণাধীন ভবনের মাটির তলদেশে সৃষ্টি হওয়া স্তর দিয়ে পানি অন্যত্র ঢুকে পড়েছে। একপর্যায়ে পানির চাপ বাড়ায় সড়ক দেবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পাশের দুটি দোকান ভেঙে যাওয়াসহ যুক্ত বাংলা আইন পরিষদের সদস্য আব্দুল হাকিম উকিলের কবরস্থান ভেঙে গেছে। এখন আশপাশের ভবনগুলো প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে। আগুন ধরে যাওয়ায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ সড়কের আশপাশের প্রায় ১ হাজার পরিবারের রান্নাবান্না নিয়ে গৃহিণীরা সংকটে পড়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষ্মীপুর মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীসহ এ রুটে চলাচলকারীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক শাহিন কাদির রিপন বলেন, পাইলিংয়ের কারণেই মাটি সরে গিয়ে আমার দুটি দোকান ভেঙে গেছে। এতে আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় ভবন মালিক শামছুল আলম বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভবনের পাইলিং করায় সড়ক দেবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এখন আমার ভবনটি ঝুঁকিতে আছে।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের লক্ষ্মীপুর কার্যালয় ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) এসএম জাহিদুল ইসলাম বলেন, লাইনে আগুন ধরে যাওয়ায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগামী রবিবার কুমিল্লা থেকে লোক এসে কাজ করবে। কাজ শেষ হলে গ্যাস সংযোগ চালু হবে বলে আশা করা যায়।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রকৌশলী জুলফিকার জুয়েল বলেন, ওয়ে হাউজিংকে সাততলা ভবনের অনুমতি দিয়েছি। তারা ১০ তলা ভবনের অনুমতি নিয়েছে কিনা তা জানা নেই। পাইলিং নিয়ম অনুযায়ীই চলছিল। কিন্তু পাশেই পুকুর থাকায় মাটির নিচে পানির স্তর পেয়ে যায়। ফলে সড়কটি দেবে গেছে। এতে সড়ক আর ড্রেনের প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে তাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণ ও সড়ক সংস্কার শেষ হলেই তারা কাজের অনুমতি পাবে।
ওয়ে হাউজিংয়ের এজিএম হাসান আহমেদ বলেন, আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করছি। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটনাটি ঘটেছে। যথাযথ নিয়মেই আমরা ১০ তলা ভবন করব। পৌরসভার অনুমোদন অনুসারে এখন নির্মাণ করা হবে ৭ তলা ভবন। সড়কের যে ক্ষতি হয়েছে তার এবং দোকান মালিকদের যে ক্ষতি, সবকিছুর আমরা ক্ষতিপূরণ দেব।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাজীব কুমার সরকার বলেন, খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।