বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধ
বাগেরহাট প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:০০ পিএম
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪১ পিএম
আমাদের সবকিছু ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে গেছে। আমার বৃদ্ধ মা ছোট ছোট নাতিপুতিদের নিয়ে ঘরে ছিলেন। ঘরের মধ্যে রেখেই আগুন দিয়েছে। বাড়ির মহিলা বাচ্চা সবাইকে মেরেছে, রক্তাক্ত করেছে। সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের চোখের সামনেই আগুন দিয়েছে ঘরে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার কুলিয়াদাইড় গ্রামে বিএনপি নেতা রুহুল আমিনের পোড়াবাড়িতে তার বোন ফরিদা ইয়াসমিন এভাবেই গত বুধবার সন্ধ্যার নৃশংসতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
তার দাবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে আকুতি-মিনতি করলেও তারা হামলাকারীদের থামাতে আসেনি। তাদের নিবৃত্ত করার কোনো গরজ করেনি। আগুন দেওয়ার আগে তারা এলাকায় পৌঁছালেও আগুনের হাত থেকে বাড়িঘর বাঁচাতে সাহায্য করেনি।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমার ৮ ভাইয়ের বসতঘরের সব পুড়ে ছাই। শরীরে জড়ানোর মতো আমাদের এক টুকরো কাপড়ও নেই। বুধবার থেকে এক কাপড়ে রয়েছি। রান্নারও কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার আমরা খেয়েছি। পুরুষরা বাড়িতে নেই। বৃদ্ধ মা ও শিশুদের নিয়ে খুবই ভয়ে রয়েছি। হাসপাতালে যাওয়ারও সাহস হচ্ছে না।
রুহুল আমিনের স্ত্রী রজিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী রুহুল আমিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হতে চান। এ কারণেই তার প্রতিপক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে শত শত লোক তাদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট করেছে। বসতঘরে আগুন দিয়েছে।
এদিকে বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দলীয় নেতারা। পরে পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফও ঘটনাস্থলে আসেন।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি নেতা শামীমুর রহমান শামীম বলেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। প্রশাসনকে বলব, এরা কোনো দলের নয়, এরা সন্ত্রাসী, এদেরকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন তিনি।
ওই গ্রামের প্রায় ৫০০ মিটার দূরে প্রধান অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি। দুই বাড়ির মধ্যখানে ওই গ্রামের ভিআইপি মোড়। সেখানে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল কম, একটা থমথমে পরিবেশ, সবার মধ্যে একটি চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, রুহুল মেম্বাররা একাধিকবার আমাদের ওপর হামলা ও মারধর করেছে। গতকালও (বুধবার) প্রথমে আমাদের ভাইপো মামুন মোল্লা ও মাহমুদ মোল্লাকে মারধর করে, তাদের নিয়ে আমার স্বামী হাসপাতালে ছিল। বিকালে খবর আসে আমাদের বাড়িতে রুহুল মেম্বারের লোকজন হামলা করতে আসছে, তখন বংশের লোকজন এগিয়ে যায়। কিন্তু ওই বাড়িতে কারা আগুন দিয়েছে, তা আমরা জানি না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ বলেন, আগে থেকেই সেখানে বিএনপির দুই পক্ষের উত্তেজনা ছিল। মারামারির খবর পেয়ে পুলিশ সেনাবাহিনী সেখানে গিয়েছে। আমরা উপস্থিতি থাকায় বড় কোনো অঘটন ঘটেনি। সেখানে পুলিশ আগুন নেভানোর কাজেও অংশ নেয়। অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকে রুহুল মেম্বারের সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের মধ্যে বিরোধ সামনে চলে আসে। এ নিয়ে দুপক্ষের লোকজনের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে এই বিরোধ চরমে পৌঁছয়। সবশেষ গত সোমবার রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে মারপিট ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় পাঁচজন আহত হয়। এর জেরে বুধবার দুপুরে ও বিকালে দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সন্ধ্যায় রুহুল মেম্বার ও তার ৭ ভাইয়ের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করাসহ বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এতে ৮টি বসতঘর পুড়ে ছাইয়ে পরিণত হয়েছে।