× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলার পর ২০০ বছরের মাজার ভাঙচুর

ময়মনসিংহ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৫৩ পিএম

আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৩৯ পিএম

কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলার পর ২০০ বছরের মাজার ভাঙচুর

ময়মনসিংহ নগরের থানাঘাট সংলগ্ন এলাকায় হযরত শাহ সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রহ.)-এর মাজারে মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালি অনুষ্ঠান হামলা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর গভীর রাতে কয়েকশ মাদ্রাসাছাত্র গিয়ে হামলা চালিয়ে ২০০ বছরের পুরোনো মাজারটির একটি অংশও ভেঙে দিয়েছে। এ সময় মাজারের দানবাক্স থেকে টাকা লুট ও অন্য মূল্যবান মালামাল লুটে নেওয়ারও অভিযোগ করেছে মাজার কমিটি।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতের এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শহরের রাজনৈতিক নেতা, সংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। এ ঘটনায় শহরে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরের কোতোয়ালি মডেল থানার সামনে সড়কের পাশে হযরত শাহ সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রহ.)-এর মাজার প্রায় দেড়শ বছরের বেশি সময় আগে গড়ে ওঠে। মাজারের ১৭৯তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে গত বুধবার রাতে কাওয়ালি গানের আয়োজন করে ভক্তরা। রাতে গানের অনুষ্ঠান শুরুর পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে দলবেঁধে মাথায় টুপি পরা অবস্থায় দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এ সময় মঞ্চ ও চেয়ার গুঁড়িয়ে দেয় তারা। এরপর তারা ওই রাত তিনটার দিকে মাজারে হামলা চালায়। মাজারের পাকা স্থাপনা, মাজারের বিভিন্ন অংশ ভেঙে দেয়। ভেতরে থাকা জিনিসপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ও দানবাক্স খুলে টাকা লুট করার পর সড়কে ফেলে রাখে। 

মাজারের সদস্য মাছুদুর রহমান চিশতি বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে মাজারে ১৭৯তম বাৎসরিক মাহফিলের আয়োজন করা হয়। নদের পাড়ে ভক্তদের নিয়ে কাওয়ালি গান শুরু হলে বড় মসজিদ মাদ্রাসার হুজুররা গানের অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। তারা মঞ্চ ও শামিয়ানা গুঁড়িয়ে দেয়। এর পর তারা রাতের অন্ধকারে মাজার ভাঙচুর করে। মাজারের দানবাক্সের টাকা লুটসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে গেছে। 

তিনি এ ঘটনার জন্য কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশকে দোষারোপ করে বলেন, থানার সামনে এ ঘটনা ঘটল, অথচ পুলিশ হামলার খবর পেয়েও এগিয়ে আসেনি। বরং এ ঘটনার সময় থানা গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। 

হযরত শাহ সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রহ.)-এর মাজারে পীর খলিলুর রহমান চিশতী নিজামী বলেন, বুধবার হযরত শাহ সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রহ.)-এর ১৭৯তম ওরস উপলক্ষে মাগরিবের পর মিলাদ করা হয়। মিলাদ শেষে ঠিক থানা গেটের সামনে শামিয়ানা টানিয়ে সামা গানের আয়োজন করা হয়। সেখানে অনেক ভক্ত ও আশেকান জড়ো হয়। রাত ১১টার দিকে ওসি সাহেব এসে তাড়াহুড়া করে গান-বাজনা বন্ধ করতে বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকশ মাদ্রাসাছাত্র এসে সব ভেঙে চুরমার করে দেয়। তারপর তারা চলে যায়।

কিন্তু রাত ৩টার দিকে ছাত্ররা আবার এসে মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বলে জানান খলিলুর রহমান চিশতী।

তিনি বলেন, আমরা খুব সুখে ছিলাম, দেড়শ বছরের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেনি। আমরা এখানে অন্যায় কিছু করিনি। তারা এসব না ভেঙে বললেই পারত, আমরা সবকিছু বন্ধ করে দিতাম। এখন বিচার চাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো করণীয় নেই। সঠিক বিচার হোক, এটাই আমাদের চাওয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামিয়া ফয়জুর রহমান রহ. মোমেনশাহী বড় মসজিদ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, ছাত্ররা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী। তারা রাত ১টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে। থানার গেটের সামনে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা ও মেয়েদের নাচ হচ্ছিল। তা কানে আসায় শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেনি। পরে কয়েকজন শিক্ষার্থী গিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করে দিয়ে আসার সময় দুই-একজন শিক্ষার্থীকে স্থানীয়রা মারধর করে হুমকি দিয়েছিল। পরে রাগে-ক্ষোভে শিক্ষার্থীরা মাজারেও কিছুটা ভাঙচুর করেছে, তবে সে বিষয়টি আমি সকালে অবগত হয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, এমন ঘটনায় যেন তারা আর জড়িত না হয়।

মাজার ভাঙার অভিযোগের বিষয়ে বড় মসজিদের প্রধান মুয়াজ্জিন শহীদুল ইসলাম বলেন, রাতে মাইক বাজিয়ে গানবাজনা করছিলেন মাজারের লোকজন। উচ্চস্বরে গান বাজানোর কারণে ছাত্রদের পড়ায় সমস্যা হয়। এমন অবস্থায় ছাত্ররা গিয়ে গানের সাউন্ড কমাতে বলেন। কিন্তু তা না করে গানের আসর থেকে উস্কানিমূলক কথা বলায় ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানে গিয়ে ভাঙচুর করে। তবে তিনি মাজার ভাঙার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

মাজার ভাঙার বিষয়টি স্বীকার করে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, মাজারে গান শুরু হলে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে বাধা দেয় ও গানের মঞ্চ ভেঙে দেয়। পরে রাত তিনটার দিকে মাজারটিও ভেঙে দেয় তারা। এ বিষয়ে মামলা নেওয়া হচ্ছে। এর পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা