চৌদ্দশত বাইপাস সড়ক প্রকল্প
সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪১ পিএম
২০১৯ সালে কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ চৌদ্দশত বাইপাস সড়ক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। জমি অধিগ্রহণ ও জমি ভরাটের কাজ শেষে সড়কের পাশে ইটও রাখা হয়। তবে এরই মধ্যে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বুধবার প্রকল্প এলাকায়। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের যানজট কমানো এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিস্তীর্ণ হাওর ও উজান এলাকায় ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে আট কিলোমিটার দীর্ঘ বাইপাস সড়ক নির্মাণ ও সড়কের দুই প্রান্তের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়। তবে প্রকল্পের মূল কাজ শুরুর আগেই এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে উন্নয়ন কাজ। এতে বিপুল অংকের অর্থ গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনি প্রতিদিনই বেড়ে চলা যানজটে নাকাল হয়ে পড়ছে কিশোরগঞ্জ শহর ও এর আশপাশের এলাকার মানুষ।
সড়ক ও জনপথ অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, জেলা শহরে যানজট নিরসন এবং হাওর অঞ্চল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০১৯ নভেম্বর মাসে ৭৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প একনেক অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের আওতায় শহরের বাইরে দিয়ে সদর উপজেলার চৌদ্দশত এলাকা থেকে ছয়না এলাকা পর্যন্ত ৭.৮ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণ এবং হাওরের প্রবেশদ্বার চামড়া বন্দর পর্যন্ত আরো ২০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের কাজ করতেই চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণ ও সড়ক ও অন্যান্য কাঠামো নির্মাণে খরচ হয়ে গেছে পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি। বর্তমানে বাইপাস সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় এখান দিয়ে চলাচলকারীরা প্রতিদিন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওরাঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন উপজেলার গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের মধ্য দিয়ে রাস্তা অতিক্রমের বিকল্প নেই। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা মানুষকেও শহরের ভেতর দিয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যাতায়াত করতে হয়। ফলে এমনিতেই সরু ও অতিরিক্ত যানবাহনে বিপর্যস্ত জেলা শহরের সড়কগুলিতে ভয়াবহ যানজট সৃষ্ট হয়। হাওরে পর্যটন মৌসুমে বাড়তি যানবাহনের চাপে আরো নাজুক হয়ে পড়ে পরিস্থিতি। এ নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ রয়েছে জেলা সদরের মানুষের। বাইপাস না হওয়ায় ক্ষুব্ধ জেলা শহরের বাসিন্দারা।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের জেলা শাখার সভাপতি মো. ফিরোজ উদ্দীন ভূঁইয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শহরে তীব্র যানজটের কারণে প্রতিদিনের চলাফেরাসহ জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো কোনো মতেই সম্ভব হচ্ছে না। ভালো করে হাঁটা পর্যন্ত যায় না এই শহরে। অভিভাবকরা দুর্ঘটনার ভয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে পাঠিয়ে আতঙ্ক থাকেন।
সাংস্কৃতিককর্মী আবু জাবিদ ভূঁইয়াঁ সোহেল বলেন, দীর্ঘ যানজটের কারণে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এতে রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটছে। ব্যবসায়ীদেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে যানযটের কারণে। বাইপাস সড়কটি নির্মিত হলে শহরের যানজট কিছুটা হলেও কমে যেত।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত এলাকার বাসিন্দা একরামুল হক বলেন, এই বাইপাস নির্মাণে ভরাট করা মাটির সড়কে আমাদের অনেক কষ্ট করে চলাচল করতে হয়। বর্তমানে সব সময় ধুলাবালি ও খানা-খন্দ এবং বর্ষায় জমে থাকা কাদা-পানির মধ্য দিয়ে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। সড়কটি চালু হলে তাদের দুর্ভোগ কমে আসত। একই রকম ক্ষুব্ধ বাইপাস নির্মাণে যাদের জমি অধিগ্রহণ হয়েছে সেই ভূমি মালিকদের।
সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের ছয়না গ্রামের বাসিন্দা সুলতান মিয়া বলেন, জমি অধিগ্রহণের কারণে এমনিতেই জমি কমে যাওয়ায় ফসলাদি চাষের সুযোগ সীমিত হওয়ায় আয় কমে গেছে। তা ছাড়া সড়কে ধুলার কারণে আশপাশে বাদবাকি জমির ফসল ও মৎস্য খামারের ক্ষতি হচ্ছে।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহ-সভাপতি স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, আমাদের দেশে প্রকল্প গ্রহণ এবং অর্থ ব্যয়ে যতটা আগ্রহ দেখা যায়, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ততটাই ধীরগতি দেখা যায়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন ও জনগণের সেবাদানের ক্ষেত্রে ততটা আগ্রহ দেখা যায় না। ফলে অর্থের যেমন অপচয় হয়, জনগণও সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধের কথা স্বীকার করে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, গত জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমি কয়েক দিন হলো এসেছি। ৫৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাকি কাজের ২১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ফেরত যাওয়ায় কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। প্রকল্পের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে আবেদন করা হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানো হলে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করি।