লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৯ পিএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:২১ পিএম
লক্ষ্মীপুরের একটি মারামারি-হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি সজিব ও সাইফুল ইসলাম শুভ প্রবাসে রয়েছেন। তাদের পরিবর্তে ভুয়া ব্যক্তিদের আদালতে দাঁড় করিয়ে জামিন নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারণা করে জামিন নেওয়ার ঘটনায় আদালতপাড়া ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।
এ বিষয়ে ওই মামলার বাদী শামছুর নেছা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লিখিত অভিযোগ করেছেন। পরে আদালত এ ঘটনায় আসামিদের আইনজীবী লুৎফুর রহমান গাজীর লিখিত বক্তব্য চেয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রামগঞ্জ আদালতের পেশকার মোরশেদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) আব্দুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আদালতে উপস্থিত করার জন্য বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইলের নির্দেশনা ছিল। তিনি ছুটিতে থাকায় নতুন তারিখ দেওয়া হয়েছে। আগামি ১৩ জানুয়ারি জড়িতদের আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। বাদীর আইনজীবী মো. রায়হান ইসলাম বলেন, ঘটনাটি নিয়ে বিজ্ঞ আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর লিখিতভাবে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. লুৎফুর রহমান রহিম গাজী লিখিত ব্যাখ্যায় আদালতকে জানান, আইনজীবীর সহকারী আবুল কাশেমের পরামর্শে মামলার ২ ও ৪ নম্বর আসামি প্রবাসে থাকার বিষয়টি গোপন রেখেছে অন্যরা। ওই বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না এবং তার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালত, আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের সোন্দড়া গ্রামের আবদুল খালেকদের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে তাজুল ইসলাম খোকাদের জমিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালে আদালতে মামলা হয়। ২০২৪ সালের ১৯ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ থানার এসআই মো. মনিরুজ্জামান আদালতে ৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তারা হলেনÑ তাজুল ইসলাম খোকা, সজীব, আনোয়ার হোসেন ও সাইফুল ইসলাম শুভ। এদিকে ঘটনার পর সজিব সৌদি আরব ও সাইফুল কাতার চলে যান।
অন্যদিকে গেল বছরের ৩০ জুন আসামি খোকা ও আনোয়ার জামিন নেন। তখন সজিব ও সাইফুলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালতের বিচারক। গত বছরের ৬ নভেম্বর তাদের স্থলে ভিন্ন ব্যক্তিদের রামগঞ্জ আমলি আদালতে উপস্থিত করা হয়। পরে আদালত তাদের জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। তবে আদালতে উপস্থিত করা ভুয়া ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
বিষয়টি জানতে পেরে গত ৮ ডিসেম্বর বাদী শামছুর নেছা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সজিব ও সাইফুলকে সশরীরে হাজির ও জামিনের আদেশ বাতিলের আবেদন করেন। একই সঙ্গে আসামিদের নিযুক্ত কৌঁসুলি ও স্থানীয় জামিনদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন।
আদালতের বিচারক ঘটনাটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চান। পরে ২৯ ডিসেম্বর আসামিদের আইনজীবী রহিম গাজী আদালতে লিখিত ব্যাখ্যা দেন। একই ব্যাখ্যা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে দিয়েছেন। তিনি জানান, আইনজীবীর সহকারী আবুল কাশেম দুজন লোককে এনে আসামি হিসেবে আদালতে উপস্থিত করায়। পরে তাদের জামিন করানো হয়। তিনি আসামিদের চিনতেন না।
বক্তব্য জানতে আইনজীবীর সহকারী আবুল কাশেমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তাকে এসএমএস দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।