× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বাস্থ্যসেবা যেখানে সোনার হরিণ

রাজু আহমেদ, রাজশাহী

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৩৬ এএম

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে। প্রবা ফটো

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে। প্রবা ফটো

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দুর্গম চর আষাড়িয়াদহের বাসিন্দা আদিবা সুলতানা একজন গৃহিণী। তার দাবি, এই চরে অপ্রতুল স্বাস্থ্যসেবার কারণে কেউ প্রসূতি হলে পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় থাকে। প্রসববেদনা উঠলে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে প্রসূতিকে বিশাল পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে নিয়ে যেতে হয় শহরের হাসপাতালে। পরিবারের সদস্যদের মুখোমুখি হতে হয় অকল্পনীয় দুর্ভোগের। শুধু প্রসূতিই নয়, বয়স্ক বা শিশু-কিশোরদের কেউ অসুস্থ হলেও ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড়ি দিতে হয়; যেতে হয় ৪০ কিলোমিটার দূরে শহরের কোনো হাসপাতালে। 

আদিবা নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, চরের জীবন খুব কষ্টের। এখানে চিকিৎসক বলতে কেউ নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা বলা হলেও সেখানে চিকিৎসক দূরের কথা, স্বাস্থ্যকর্মীরাও ঠিকমতো উপস্থিত থাকেন না। উপস্থিত হলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে যান। তারা শহর থেকে আসেন চরে অফিস করতে। 

আদিবার কথার সত্যতা যাচাই করতে গত শনিবার সরেজমিনে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে দেখা যায়, অফিস ফাঁকা। অফিসে মাঠ পরিদর্শক ও নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া কেউ নেই। মাঠ পরিদর্শক মো. হাসান বলেন, ‘সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট মেডিকেল অফিসার পদ থাকলেও সেটি ফাঁকা থাকায় ফার্মাসিস্ট এখন দায়িত্বে রয়েছেন। তবে তিনি কিছুক্ষণ আগে বাইরে গেছেন। রবিবার (পরদিন) অফিসে আসবেন। প্রতিদিন গড়ে ৭০ জন রোগী আসেন।’ অফিস ফাইল দেখিয়ে তিনি বলেন, শনিবার চিকিৎসা নিয়েছে ৫২ জন রোগী। 

আষাড়িয়াদহ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দুর্গম চরগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায় ৪০ হাজার জনবসতির এই চরে রয়েছে মাত্র একটি পরিবার ও স্বাস্থ্যকল্যাণ কেন্দ্র। তবে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাঁচটি পদের বিপরীতে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট মেডিকেল অফিসারসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রধান দুটি পদই শূন্য। এমন অবস্থায় নিজ এলাকায় কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ।

রাজশাহীর পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা নদীর ওপারে দুর্গম চর আষাড়িয়াদহ, খানপুর, খিদিরপুর ও মাঝারদিয়ার চরে বসবাস করা লক্ষাধিক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেতে এখনও নদী এপারের শহরকেন্দ্রিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর ওপর নির্ভরশীল। চরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। নেই কাঙ্ক্ষিত জনবল ও রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা। চরবাসীর দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীরা ঠিকমতো অফিসও করেন না। ফলে এইসব চরাঞ্চলের কেউ গর্ভবতী বা গুরুতর রোগে আক্রান্ত হলে তাদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা ও ঝুঁকির মধ্যে সময় পার করে পরিবারের সদস্যরা। এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজশাহী পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. কস্তুরী আমিনা কুইনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

আষাড়িয়াদহ চরের বাসিন্দা আক্কাছ আলী বলেন, ‘চরে কোনো ক্লিনিক নেই, নেই চিকিৎসক। রাতে কেউ অসুস্থ হলে ঘাটে নৌকা পাওয়া যায় না। সকালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এমনও হয়েছে নদী পার হতে হতেই রোগী মারা গেছে।’ আরেক বাসিন্দা মো. হান্নান বলেন, ‘শহর থেকে এই চরের দূরত্ব ৪০ মিলোমিটার। শুনতে সহজ মনে হলেও শহরে যেতে অন্তত পাঁচ জায়গায় যানবাহন পরিবর্তন করতে হয়। যাতায়াত যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ। চরের এলাকার মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা স্বাস্থ্যসেবা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। আমরা চাই এখানে চিকিৎসকসহ আধুনিক সুবিধাসংবলিত একটি ক্লিনিক। যেখানে সেবা পাবে চরের প্রসূতিসহ সব বয়সের মানুষ।’

তবে রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, এই জেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ২৩৫টি। তবে চরাঞ্চলে জনসংখ্যার তুলনায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা যেমন কম, তেমনি রয়েছে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি, যা এই জেলার পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা নদীর ওপারের অন্তত চারটি দুর্গম চরের লক্ষাধিক বাসিন্দার জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

রাজশাহী জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মোসা. মাহাবুবা খাতুন বলেন, ‘চরাঞ্চলে যে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে, তা সেখানে বসবাসকারীদের চাহিদার তুলনায় কম। সেই সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলায় চিকিৎসা কর্মকর্তার ঘাটতি রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এটাও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয়। প্রত্যন্ত চরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনজিওগুলোর মাধ্যমে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) কাজ করার পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা