প্রবীর সুমন, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি)
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:৪৯ এএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০৩ এএম
বছরের আগস্টের বন্যা, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পানছড়ি সংযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত শুক্রবার উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নের তেভাংছড়া এলাকায়
গত বছরের আগস্টের পর বন্যা, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ি দীঘিনালা পানছড়ি সংযোগ সড়কের তেভাংছড়া এলাকার প্রায় সম্পূর্ণ অংশ মাইনী নদীতে তালিয়ে যায়। এর পাঁচ মাসেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নের আট গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে কামাকুছড়া হয়ে মাইনী নদীর কোল ঘেঁষে দীঘিনালা পানছড়ি সংযোগ সড়কটি ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে সাড়ে আট কিলোমিটার কার্পেটিং। বাকিটা ইট সলিং, যা কার্পেটিংয়ের জন্য রাখা হয়েছে। সড়কটি দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে এলজিইডি।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, তেভাংছড়া এলাকায় মূল সড়কের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ মাইনী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদীটি সড়ক থেকে প্রায় ৫০০ ফুট দূরে চলে গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, বোয়ালখালী ইউনিয়নের আটটি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। সড়ক ভেঙে যাওয়ার পর এলাকাবাসীর উদ্যোগে পাশের জমি ভরাট করে হালকা যানবাহন চলাচল করলেও কৃষিপণ্য নিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করার সুযোগ নেই। এতে চরম দুর্ভোগে তেভাংছড়া, বটতলী, কাটারংছড়া, নুনছড়ি চৌধুরী পাড়া, যৌথ খামার, নীলপাড়া, বদন কুমার কার্বারিপাড়া ও রাম রতন কার্বারিপাড়ার বাসিন্দারা। এসব এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনের খরচ দ্বিগুণ হয়ে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান একাধিক কৃষক।
তেভাংছড়া এলাকা যুব কমিটির সভাপতি নিমেন্টু চাকমা বলেন, বন্যায় সড়ক ভেঙে যাওয়ার পর আমরা এলকাবাসী চরম দুর্ভোগে আছি। এখনও সড়ক মেরামত না হওয়ায় কৃষিপণ্য বাজারজাত করার সময় আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত সড়ক মেরামতের দাবি জানাই।
তেভাংছড়া পাড়ার সাবেক কার্বারি পলেন চাকমা বলেন, রাস্তা মেরামতের জন্য একাধিক অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি। আগামী বর্ষার আগে রাস্তা মেরামত করা না হলে যাতায়াত স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ফসলের জমি ভাঙনের কবলে পড়বে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রিফিউজি চাকমা বলেন, এখন কৃষিপণ্য বাজারজাত করার সময়। রাস্তা মেরামত না করায় আমাদের রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়া করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে।
বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা বলেন, বোয়ালখালী ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের একমাত্র গাড়ি পথ এটি। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার কারণে এলাকার কৃষিপণ্য পরিবহন, অসুস্থ রোগী, গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাস্তাটি দ্রুত মেরামত না হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়বে। তিনি সড়কটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানান।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেন, গত বছরের আগস্টের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করার জন্য ইতোমধ্যে লে-আউট দেওয়া হয়েছে। এ বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় কার্পেটিং ও এইচবিবি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ সড়ক দ্রুত মেরামতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসেই কয়েক দফায় বন্যা হয়েছে। এতে উপজেলার মেরুং, কবাখালী ও বোয়ালখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা। বেশিরভাগ সড়কের কার্পেটিং ভেঙে কৃষিজমিতে চলে গেছে। মূল সড়কটি বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে।