মোরেলগঞ্জ
এম. পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৫৩ এএম
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০ পিএম
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে নদীর তীরবর্তী গ্রামীণ জনপদের বারইখালী ফেরিঘাট থেকে ঘষিয়াখালী অভিমুখি ১০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার বেহাল দশা। প্রায় ৩০ হাজার মানুষের এখন চলাচলের একমাত্র ভরসা নৌপথ। দুই যুগেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ জনপদের মানুষের। স্থানীয়দের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ, পর্যাপ্ত স্লুইসগেট ও পাকা রাস্তা নির্মাণের।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পানগুছি নদীর তীরবর্তী বহরবুনিয়া ও বারইখালী ইউনিয়নের মানুষ ২৫ বছর ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত। বিগত দিনে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপক কাজ হলেও এ জনপদের বহরবুনিয়া, উত্তর ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী, পশ্চিম বহরবুনিয়া, নারিকেলবাড়িয়া ও বারইখালী ইউনিয়নের উত্তর সুতালড়ী, কাশ্মির, এসবি বাজারসহ ৮ গ্রামের রাস্তাঘাটে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যে কারণে ফেরিঘাট থেকে ঘষিয়াখালী অভিমুখী ১০ কিলোমিটার কাঁচাপাকা রাস্তার বেহাল দশা। রাস্তা বড় বড় খানাখন্দে ভরা। অন্যদিকে নদীগর্ভে প্রতিনিয়ত কাঁচা রাস্তা ভেঙে মূল রাস্তার আকৃতি হারিয়ে ঘেরের ভেড়ির রাস্তায় রূপ নিয়েছে।
তারা আরও জানান, নদীর তীরবর্তী এ গ্রামগুলোর প্রায় ৩০ হাজার মানুষের চলাচলে পায়ে হেঁটে সড়কপথে উপজেলা শহরে আসা এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। গ্রামের মানুষের চলাচলে এখন একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রলার, নৌকা, লঞ্চ। প্রতি বছরই বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে একাধিকবার মাটির রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণ করেও কাজে আসছে না। হুমকির মুখে পড়েছে ৮ গ্রামের ১০ হাজার পরিবার, ৩টি কলেজ, ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি মাদ্রাসা, ২০টি মসজিদ, ফুলহাতা বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, হাইস্কুল পরীক্ষা কেন্দ্র, কৃষি ব্যাংকসহ জনগুরুত্বপূর্ণ একাধিক স্থাপনা।
প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম খান বলেন, প্রতি বছর বন্যা এলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। রাস্তাঘাট নদীতে চলে যায়। পরবর্তীতে আর রাস্তা হয় না। লবণ পানির কারণে এমনিতে কোনো ফসল হয় না, উপার্জনের একমাত্র পথ মৎস্য চাষে সংসার চলে। রাস্তাঘাট না থাকায় স্কুলে ছেলেমেয়েদের যেতে খুবই কষ্ট হয়। তাই টেকসই বেড়িবাঁধসহ পাকা রাস্তা নির্মাণের জোর দাবি জানাই।
বহরবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিপন হোসেন তালুকদার বলেন, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর পরবর্তী আরআরএফ সংস্থার মাধ্যমে বহরবুনিয়া হয়ে ঘষিয়াখালী ৭ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাজ শেষ না করেই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দে টিআর কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে বহরবুনিয়া বাজার থেকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় আইলায় সে রাস্তাটি ভেঙে গেছে। স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও ৬টি খালের মোহনায় স্ল্রুইসগেট নির্মাণ করা হলে নদীর তীরবর্তী রাস্তাগুলো আর বিলীন হবে না।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, নদীর তীরবর্তী বহরবুনিয়া ও বারইখালীর ইউনিয়নের একটি অংশে একাধিকবার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রতি বছর বন্যার কারণে রাস্তাগুলোর স্থায়িত্ব থাকছে না। তাই নতুন করে রাস্তা নির্মাণের কোনো প্রস্তাবনা পাঠানো হয়নি। স্থায়ী বেড়িবাঁধ হলে পর্যায়ক্রমে নতুনভাবে রাস্তা নির্মাণ করা হবে।