মহসিন রেজা রুমেল, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর)
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:২৭ এএম
দেওয়ানগঞ্জের চর আমখাওয়ার সকাল বাজার এলাকায় বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতের পাশে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়াল। শনিবার তোলা। প্রবা ফটো
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে মাঠে মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ দৃশ্য। পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে হলুদের চাদরে। উপজেলার মৌ-চাষিরাও ব্যস্ত সরিষা থেকে মধু সংগ্রহে। ফসলি জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির তারা। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের সকাল বাজার এলাকায় ২০০টি মৌমাছির বাক্স বসিয়ে পোষা মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা। এ ছাড়াও পাররামরামপুর ইউনিয়নের বাঁশতলী, চর আমখাওয়া ইউনিয়নের সানান্দবাড়ী, ডাংধরা ইউনিয়নের পাথরের চর এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন স্পটে আরও ৫০০টি বাক্স বসিয়ে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌমাছি মধু আহরণের ফলে সরিষা ফুলে ফুলে পরাগায়ন ঘটে। উপজেলায় এ বছর ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এই বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে সরিষা চাষ করতে এ অঞ্চলের কৃষকেরা বেশি আগ্রহী হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, বিস্তীর্ণ সরিষাক্ষেতের পাশে বাক্স বসিয়ে পোষা মৌমাছি দিয়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা। আর এ দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে ছবি তুলছে, ভিডিও ধারণ করছে কেউ কেউ।
সাতক্ষীরার শ্যামপুরের জুলফিকারের নেতৃত্বে ১২ জনের একটি দল এসেছে মধু সংগ্রহ করতে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমে সরিষাক্ষেত থেকে দুইবার মধু সংগ্রহ করতে পারেন তারা। জুলফিকার বলেন, সরিষার মধু যেমন খাঁটি তেমনি সুস্বাদু। তাই বাজারে এই মধুর বেশ চাহিদা রয়েছে। মধুর দামও বেশ ভালো।
তিনি আরও জানান, গত বছর তিনি ৪০০টি মৌমাছির বাক্সে ১০০ মণ মধু সংগ্রহ করেছিলেন। যা প্রায় ১২ হাজার টাকা মণ প্রতি বিক্রি করেছেন। এ বছর তিনি আরও ৩০০টি মৌমাছির বাক্স বৃদ্ধি করে ৭০০টি মৌমাছির বাক্স বসিয়েছেন। দেশের ও দেশের বাইরের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে মধু কিনে নেয়। তার মধ্যে প্রাণ, এপি, হামদর্দ, স্কয়ার, ডাবর উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও অনলাইনে মধু বিক্রিকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও মধু কিনে নেয়।
জুলফিকারের দলে আসা শ্রমিক মো. হাসিব বলেন, তাদের বাক্সে রানি, পুরুষ ও শ্রমিকÑ এই তিন ধরনের মৌমাছি আছে। এক সপ্তাহে প্রতিটি মৌমাছি বাক্সের প্রতি প্যানেলে দেড় কেজি থেকে দুই কেজি পর্যন্ত মধু আহরণ করতে পারে। আর প্রতি বাক্সে থাকে ৫টি প্যানেল। সে অনুযায়ী একটি বাক্সে ১০ কেজি করে মধু আহরণ করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর আজাদ বলেন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় জানা গেছে সরিষা ফুলে মৌমাছি মধু আহরণের ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে ২০- ২৫ ভাগ ফলন বেশি হয়। সরিষা ফুলে মৌমাছির মাধ্যমে মধু আহরণের ফলে ফলনে বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে মৌয়ালী ও কৃষক দুজনই লাভবান হয়।