পাবনা সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২২ ২০:৪৪ পিএম
পাবনা জেনারেল হাসপাতাল।
অপ্রতুল শয্যা, ওষুধ-স্যালাইনসহ অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ পাবনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের অবস্থা এমনই বেহাল। তারওপর শীত শৌসুম শুরুতেই শিশুদের ডায়রিয়ার প্রকোপে শয্যার চেয়ে চার গুণ রোগী ভর্তি হাসপাতালে। এমনকি গত এক সপ্তাহে হাসপাতালটিতে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শীত মৌসুমের শুরুতে এত রোগীর চাপ ভালো লক্ষণ নয়। অধিক রোগীর চাপ সামলাতে বেশ হিমসিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের। রোগী ও তাদের স্বজনরাও বিপাকে পড়েছেন। ওয়ার্ডগুলোয় শয্যা সংখ্যা রোগীর তুলনায় কম। যে কারণে তাদের মেঝে বা বারান্দায় সেবা নিতে হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, পাবনা জেনারেল হাসাপাতালে গত এক মাসে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর ভর্তির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছেন ২৫০ জন। শিশু ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি আছে ৯২ জন ও ৮৫ জন ভর্তি আছেন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে।
জেলায় বেসরকারি হাসপাতালে সেবা অপ্রতুল। প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জের বাসিন্দাদের একমাত্র আস্থা সরকারি এ হাসপাতালটি। কিন্তু সামান্য চিকিৎসা সেবা ছাড়া আর কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই বলে অভিযোগ রোগী ও তাদের স্বজনদের।
তারা বলেন, শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ থাকে না। তাদের বাইরে থেকে সেসব নিয়ে আসতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোগীর স্বন বলেন, নোংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে নবজাতকের জন্ম হচ্ছে। প্রসূতি ও তাদের সন্তানদের সেখানেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। পাবনা জেনারেল হাসপাতাল অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।
তার দাবি, হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। তাই সবই তাদের বাইরে থেকে করাতে হয়্ এমনকি হাসপাতালে রোগীর চেয়ে দালালের সংখ্যা বেশি।
এসব ব্যাপারে কথা হলে হাসপাতালে দায়িত্বরত কয়েকজন নার্স জানান, শীত শুরু হতেই যেভাবে রোগীর ভর্তি শুরু হয়েছে, তাতে করে স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কলেরার স্যালাইন সরবরাহ ছিল না। এ ওয়ার্ড দুইভাগে বিভক্ত। একটি পরিচালিত হয় মেডিসিন থেকে, অপরটি শিশু বিভাগ থেকে। নার্সরা নিয়ম অনুসারে সেবা দিয়ে থাকেন।
অপ্রতুল স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধের অপ্রতুলতার কারণে তাদের সেবা দান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান তারা।
তা ছাড়া ১৫ শয্যার ডায়রিয়া বিভাগে প্রতিদিন বহু রোগী আসে। ফলে অনেক রোগী হওয়ায় সঠিকভাবে কম সংখ্যক নার্সের জন্য সেবা দেয়া যাচ্ছে না বলেও জানান নার্সরা।
হাসপাতালের সিনিয়র নার্স আম্বিয়া পারভীন জানান, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যেসব শিশু মারা গেছে, তাদের অবস্থা আগে থেকেই খুবই সংকটাপন্ন ছিল। সংশ্লিষ্টরা তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে অনেক চেষ্টাও করেছে।’
সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হলে পাবনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসলে পাবনায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু হওয়া দরকার। আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে শয্যার তুলনায় রোগী বেশি ভর্তি। দৈনিক ৫০০-৬০০ রোগী ভর্তি থাকে। ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে গত কয়েকদিন বেশ চাপ ছিল। এখনও শয্যার চেয়ে চারগুণ বেশি রোগী রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে যে সংকট রয়েছে, সেটি মোকাবিলায় আমরা সচেষ্ট। সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে আমরা সেভাবে করার চেষ্টা করছি। রোগী বা তাদের স্বজনদের অভিযোগও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। স্বল্প সরবরাহ দিয়ে রোগীর সেবা করা কঠিন।’