ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:১৮ পিএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৪ পিএম
প্রবা ফটো
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় পৌর কাঁচা বাজারে সব ধরনের শীতকালীন সবজির দামে ধস নেমেছে। পাইকারি পর্যায়ে এক কেজি ফুলকপি দু্ই থেকে তিন টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিন থেকে চার গুণ কমেছে বিভিন্ন সবজির দাম। কমেছে নতুন আলুর দামও। দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকের।
কৃষকেরা বলছেন, চড়া দামে সার, বীজ ও কীটনাশক কিনে তাঁরা সবজি চাষ করেছেন। এক কেজি মুলা ও ফুলকপি চাষ করতে খরচ পড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। অথচ মুলা ও ফুলকপি মাত্র দুই টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এবার খেতে ব্যাপকভাবে সবজি উৎপাদন হওয়ায় বাজারে সবজি আসছে প্রচুর পরিমাণে। চাহিদার তুলনায় হাটে সবজির সরবরাহ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে বড় পৌর বাজার। দশ দিন আগেও এই হাটে ফুলকপি বিক্রি হয়েছিল ১৫ বা ২০ টাকা কেজিতে। অথচ দাম নেমে এসেছে সর্বোচ্চ তিন টাকায়। মুলাও মিলছে একই দরে। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ৮-১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে একটি বাঁধাকপি। শিমের দামও সর্বোচ্চ পাইকারি ১৫ টাকা। শশার কেজি ২৫ টাকা। শুধুমাত্র ৩৫ এর ঘরে টমেটো আর আলু।
তুলনামূলক কম দামে সবজি কিনে বেশ খুশি ভোক্তারা। তবে হতাশা বাড়ছে চাষীদের। তারা বলছেন, মাঠ থেকে হাটে সবজি নেয়ার ভ্যান ভাড়াই উঠছেনা। বীজ, সার, কীটনাশক আর উৎপাদন খরচ উঠবে কিভাবে? শারীরিক পরিশ্রমের মূল্য তো থাকছেই না।
একজন কৃষক বলেন, ফুলকপি বিক্রি করছি ২ থেকে ৩ টাকা কেজি। অথচ ফুলকপির চারা কিনছি এই দামে। আর মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা। এতে আমাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না।
এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন পাইকারি আর আড়ত মালিকরাও। বাজারের একজন পাইকারী ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে সবজির দাম কম হলেও শ্রমিকের খরচ তো কমেনি। যার কারণে আমরাও সবজি কম কিনছি। কারণ লাভ হচ্ছে না। কৃষক তো শেষ। সেই সঙ্গে আমরাও কেনাকাটা সীমিত করে দিয়েছি।
অন্যদিকে চাষীরা বলছেন, উৎপাদন বেশি। কিন্তু সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় সব মৌসুমেই বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য দাম থেকে।
কৃষক আলামিন মিয়া জানান, ফুলকপি উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় সারের পেছনে। ডিলাররা সার মজুত করে দাম বাড়িয়ে দেয়। সেখানেই অনেক টাকা ব্যয় হয়ে যায়। কিন্তু ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
কৃষক রতন মিয়া বলেন, ‘আজ ফুলকপি বিক্রির টাকা দিয়ে অটুভাড়া ও লেবার খরচ দিয়ে আর কিছু থাকবে না।ঈশ্বরগঞ্জ বাজারে ৫০০ ফুলকপি আনতে মোট খরচ হয়েছে ১২০০ টাকা। বিক্রি করেছি ২৫০০ টাকায়।’
দাম কমেনি খুচরা বাজারেও
ঈশ্বরগঞ্জ পাইকারি বাজারে সব ধরনের শীতকালীন সবজির দাম কমলেও পৌর বাজারে এখনও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকালে শহরের মেইন রোড বাজারে প্রতি কেজি নতুন দেশি আলু ৬০ টাকা। ডায়মন্ড আলু ৫০ টাকা। ফুলকপি ২০ টাকা ও মুলা ১৬ টাকা দামে বিক্রি করছেন খুচরো বিক্রেতারা। অন্যান্য সবজির দামও তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা শিপন বলেন, পৌর পাইকারি বাজারে হাটে এক কেজি মুলা ও ফুলকপি দুই টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ বাজারে এই মুলা ও ফুলকপি ১৫ টাকা কেজির কমে মিলছে না। ১০০ গজ ব্যবধানে এক কেজি মুলা ও ফুলকপির দাম আট গুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
উপজেলা কৃষি অফিসার রিপা রানী চৌহান জানান, এবার উপজেলায় মোট ১২৭৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার রেকর্ড সবজি উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া মৌসুমের শুরুতে সব ধরনের সবজির ভালো দামও পেয়েছেন চাষীরা। বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা পড়ে গেলেও কৃষকের লোকসান হওয়ার কথা নয়। কারণ খেতের কিছু সবজি কৃষক আগেভাগে বেশি দামে বিক্রি করে দিয়েছেন।
অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কোথাও অতিরিক্ত মুল্যে সার বিক্রির অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।