যশোর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৩ পিএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৫ পিএম
যশোরে জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিল। প্রবা ফটো
যশোরে জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে পদদলিত হয়ে শিশুসহ ৩০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে পুলেরহাটের আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে তাফসীরুল কুরআন মাহফিল শেষ হওয়ার পর হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার সময় পদদলনের এই ঘটনা ঘটে।
আহতদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি থাকার তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বজলুর রশিদ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, পুলেরহাট আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ওয়াজ মাহফিল শুনতে এসে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ১০ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- মইনুল ইসলাম (৩২), ওসমান গণী (১৮), জিয়ান (২১), মারজান (১৮), ইব্রাহীম (৪০), মাসুদ (২৬), সাইদুল (২৮), লাবলী (৩০) ও আফিফা (১৪)।
আহতরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা পুলেরহাটে মাহফিলে আসেন। মেইন গেটে তালা দেয়া থাকায় তারা সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ সেখানে ঠেলাঠেলি শুরু হয়। এক পর্যায়ে পেছনে অবস্থানকারীরা সামনে আসার চেষ্টা করলে হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় পেছন থেকে ধাক্কায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকে পড়ে গেলে পদদলিত হন। এ সময় কমপেক্ষ ৩০ জন আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জুবাইদা ইসলাম জানান, আহতরা পদদলিত হয়ে কমবেশি আহত হয়েছেন। তাদের মহিলা ও পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আফিফার অবস্থার গুরুতর। বাকিরা আশঙ্কামুক্ত।
আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় পাঁচজন যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে ঘটনার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মাহফিলে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, অন্তত ৩০ জন আহতের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক মৃত্যুর খবরও রটেছে। যদিও এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।
মাহফিলের কয়েকটি সূত্র জানায়, মাহফিলকে কেন্দ্র করে চোর ও পকেটমার চক্র ছিল বেপরোয়া। তারা আদ দ্বীনের গেটে অবস্থান নিয়ে ভিড়ের ফাকে মানিব্যাগ, টাকা, মোবাইল ফোন ও মহিলাদের গলার চেইন ছিনিয়ে নিয়েছে। এসব বিষয়ে ভলেন্টিয়ার বা কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
বেনাপোল থেকে আসা সারমিন বলেন, ‘আমি বাচ্চা সাথে নিয়ে মাহফিলে ঢোকার সময় গেটে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে এক মহিলা আমার গলার চেইন ছিঁড়ে নেয়। এ সময় কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ করতে
প্রসঙ্গত, যশোর পুলের হাট আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিনে শুক্রবার মুসল্লির ঢল নামে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর আসার খবরে মাহফিল প্রাঙ্গণে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।
শুক্রবার সকাল থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হয়। বিকেল থেকে মাহফিলের স্থান ছাপিয়ে সড়ক-মহাসড়কে মানুষের ঢল নামে। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এজন্য অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান। সব সড়কের ঢেউ গিয়ে মেশে পুলেরহাটে। মাহফিল উপলক্ষে চার দিনব্যাপী ইসলামী বই মেলা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বিশাল মেলাও বসে। একইসঙ্গে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করা হয়েছিলো।
এদিন সন্ধ্যায় আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহও বক্তব্য দেন।
এদিন গোটা শহরতলীতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সন্ধ্যার পর পায়ে হাঁটা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। অনেকেই মূল অনুষ্ঠানে স্থলে পৌঁছাতে পারেননি। দূর থেকেই বক্তব্য শুনতে হয়েছে।
খুলনা থেকে আসা সম্রাট বলেন, ‘আমাদের গাড়ি সন্ধ্যায় যশোর মুড়লিতে পৌঁছায়। আর গাড়ি সামনের দিকে ভিড় ঠেলে লাগাতে পারেন। তাই গাড়ি থেকে নেমে সবাই একসাথে হাঁটা শুরু করে ওয়াজ মাহফিলে কাছাকাছি পৌঁছায়। কিন্তু মাহফিলের মূল মাঠে আমরা প্রবেশ করতে পারেনি। তাই মাহফিল থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে মাহফিল শুনেছি।’
বেনাপোল থেকে আসা নাসিমা বেগম বলেন, ‘নতুনহাট বাজারের আসার পর আমরা যানজট লক্ষ্য করি। এরপর আমাদের গাড়ি আর সামনের দিকে এগুতে পারেনি। সেখান থেকে আমরা হেঁটে মাহফিলে যোগ দেই। কিন্তু মাহফিলের মুল মাঠে প্রবেশ করতে না পেরে অনেক দূরে অবস্থান করে মাহফিল শুনেছি।’
আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের মানবসম্পদ কর্মকর্তা জাহেদ হোসাইন জানান, আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজনটা শুধু ওয়াজ মাহফিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। এখানে ইসলামী কৃষ্টিকালচার তুলে ধরা হচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত লেখকদের বই পাওয়া যাচ্ছে বই মেলার স্টলে। গার্ডিয়ান, সত্যায়ন, বিন্দু, সিয়ামসহ ২২টি প্রকাশনী এখানে স্টল নিয়েছে।
মেলায় ভিড়ে পদদলিত হয়ে কতজন আহত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক লোকের সমাগম হয়েছে। তবে মাঠের ভেতরে কোনো সমস্যা হয়নি। মাহফিল শেষে মেইন রোডে ধাক্কাধাক্কিতে কয়েকজন আহত হওয়ার কথা শুনেছি। তবে সেটা গুরুতর নয় বলে জানতে পেরেছি।’