নিয়ন দুলাল, লালমনিরহাট
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৪৫ পিএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪৩ পিএম
রেলে ভ্রমণকারী বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ভাড়া অথবা জরিমানার টাকা। আদায় করা এই অর্থ রেলওয়ের কোষাগারে জমা না দিয়ে প্রায় পুরোটাই আত্মসাৎ করছেন কতিপয় রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী। এতে প্রতিনিয়ত রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, ফলে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না লোকসানে থাকা জনগণের যাতায়াতের জন্য সরকারি এই সেবা খাত।
সূত্র জানায়, বিনা টিকিটে রেলওয়েতে ভ্রমণ করলে আছে জরিমানাসহ ভাড়া আদায়ের বিধান। বিনা টিকিটে ভ্রমণ করলে কেউ কেউ প্রকৃত ভাড়া দিয়ে রসিদ বা টিকিট নেন। কিন্তু রেলকর্মীদের হাতে প্রকৃত ভাড়ার চেয়ে কম টাকা দিয়েই ভ্রমণ করতে পারেন বলে টিকিট না কেটেই ট্রেনে উঠে ভ্রমণ করেন অনেক যাত্রী।
ট্রেনে নিয়মিত ভ্রমণ করা আরও অনেকে জানান, বিনা টিকিটে ভ্রমণ করলে সাধারণত টিকিটের নির্ধারিত মূল্যের থেকে কম টাকা দিলেই যাতায়াত করা যায়। ফলে তারা টিকিট কাটতে চান না।
যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা এসব অর্থ রেল কোষাগারে জমা না দিয়ে প্রায় পুরোটাই পকেটস্থ করছেন রেলের কর্মচারীরা, যার একটা অংশ যাচ্ছে কর্মকর্তাদের পকেটেও। সম্প্রতি টিকিটবিহীন যাত্রীর কাছে টাকা নেওয়ার একটি ফুটেজ ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, টিকিটবিহীন এক যাত্রীর কাছ থেকে রেলওেয়ের দুই অ্যাটেনডেন্ট টাকা নিচ্ছেন রসিদ না দিয়েই।
বিষয়টি নিয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবুর কাছে সাংবাদিকরা গেলে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
এদিকে ফাঁস হওয়া ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নামলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। একাধিক অ্যাটেনডেন্টের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে (ভিডিও ও অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত) জানান, লালমনিরহাট রেল বিভাগের অধীনে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনের জন্য অ্যাটেনডেন্ট রয়েছেন ১৪ জন, পার্বতীপুরে ১৪ থেকে ১৫ জন এবং সান্তাহারে রয়েছেন ৬ জন। প্রতিটি ট্রেন থেকে অনিয়মের মাধ্যমে (রসিদ না দিয়ে টাকা গ্রহণ) যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার একটি অংশ দিতে হয় ডিএমই অফিস, হেড টিএক্সআর অফিস ও অ্যাকাউন্টস অফিসকে। জনপ্রতি অ্যাটেনডেন্টকে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। ডিএমইর পক্ষে ওই অফিসের টিএক্সআর উজ্জ্বল মাহমুদ এই টাকার ভাগ নেন।
এসব বিষয়ে জানতে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক লিয়াকত শরীফ খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, ‘রসিদ ছাড়া যাত্রীরা কেন টাকা দেবে’। এ কথা বলেই তিনি কলটি কেটে দেন। পরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, রেলের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারি এই সেবা খাতকে। যা প্রতি বছর গড়ে দুই হাজার কোটি টাকার সমান। সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য সাংবাদিক আবু হাসনাত রানা বলেন, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে রেলওয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। রেলওয়ের আয় বাড়ানো এবং সরকারের অর্থের অপচয় রোধে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।