সাইফুল ইসলাম, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:১৮ পিএম
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসরের শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ছিল তৃতীয় ও প্রথম সরকারি ছুটির দিন। পূর্বাচলের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বাড়লেও বাড়েনি কেনাকাটা। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, ঠক ঠক শব্দে এখনও স্টল সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। যদিও গতবারের তুলনায় এবার বেশি জমজমাট হবেÑ আশাবাদ জানিয়েছেন মেলার আয়োজক ও ব্যবসায়ীরা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারে এবারের মেলায় গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন বিকালে ঘুরে দেখা যায়, গতবারের মতো ৭০ শতাংশ স্টল প্রস্তুত থাকলেও প্রায় ৩০ শতাংশ স্টলই অপ্রস্তুত। ‘৩৬ জুলাই চত্বর’ ও ‘তারুণ্যের বাংলাদেশ’ প্যাভিলিয়নে দৃষ্টিনন্দন নকশা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভিডিও ও স্থিরচিত্র দেখে অনেকেই আবেগ আবার কারও মুগ্ধতার কথা জানিয়েছে। দর্শনার্থীদের কেনাকাটার চেয়ে দরদাম হাঁকানো, ঘুরে দেখাতেই ব্যস্ততা দেখা গেছে।
মেলায় বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিকসামগ্রী, ফার্নিচার, দেশি-বিদেশি নানা ধরনের পণ্যসামগ্রী, টেলিভিশন, ফ্রিজ, খাদ্যসামগ্রী, নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র, কাপড়চোপড়, গাড়ি, মোটরসাইকেল, পানির পাম্প, জেলখানায় কয়েদিদের উৎপাদিত পণ্য, শিশুদের জন্য নানা ধরনের বিনোদন দর্শনার্থীদের মন কেড়েছে। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত টহল ও দায়িত্ব পালন করছেন।
শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণিপড়ুয়া শিক্ষার্থী সোয়াদা ইসলাম বলে, গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলা আরও জাঁকজমকপূর্ণ হবে বলে আশা করছি। তৃতীয় দিনেও মেলায় দোকান অপ্রস্তুত দেখে কিছুটা অবাক হয়েছি।
আব্দুল হক ভূঁইয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী দিপু রহমান বলে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কর্তৃপক্ষ এবারের মেলায় তরুণদের জন্য বিনোদনসহ জুলাই আন্দোলনের চেতনায় ৩৬ জুলাই ও তারুণ্যের বাংলাদেশ নামে কর্নার রেখেছে। পাশাপাশি শুক্র ও শনিবার উন্মুক্ত বিনোদনের আয়োজনে বেশ ভালো লেগেছে।
মধুখালীর বাসিন্দা মশিউর রহমান টিপু বলেন, ‘এবার সময়মতো মেলার আয়োজন হয়েছে। যদিও কিছু স্টলে কাজ চলছে। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ না থাকা দুঃখজনক। আমাদের রূপগঞ্জে এমন মেলা হচ্ছেÑ এটা আমাদের জন্য গর্বের। মেলায় আগত দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীদের পাশে থেকে এলাকার লোকজন সব সময় সহযোগিতা করে থাকি। কেনাকাটায়ও স্থানীয়দের অংশগ্রহণ থাকে বেশি।’
মেলার পাশের মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে ট্রাফিক পুলিশের টিআই রাজিব বাহাদুর ও তার টিম। কথা হয় রাজিব বাহাদুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেলায় পার্কিং জোন আর দর্শনার্থীদের সড়ক নিরাপত্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। এভাবে ৬ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। প্রতিবছরই এখানে সরকারি ছুটির দিনে উপচে পড়া ভিড় হয়। তবে এখনও সেই জমায়েত হয়নি। হয়তো শীতের প্রভাবে এমন হচ্ছে।’
সহকারী উপপরিদর্শক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বাইপাস সড়কের নির্মাণকাজের প্রভাবে যানজট দেখা যায়। যদিও এটা মেলার প্রভাবে নয়। অন্য সময় সরকারি ছুটির দিন মেলার যানবাহনের কারণে যানজট হতো। এবার ৩০০ ফুট সড়ক প্রস্তুত থাকায় তা ঘটেনি।’
মেলার তথ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, মেলায় এবার ছোট-বড় মিলিয়ে প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংখ্যা ৩৬৫। সাজসজ্জা ও কাজের অগ্রগতি ৭০ ভাগ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্টল পাওয়া ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘মেলায় শীতের পোশাকের চাহিদা বেশি। যদিও প্রধান উপদেষ্টা এবারের বর্ষপণ্য হিসেবে আসবাবপত্রকে ঘোষণা করেছেন। মেলায় থাকা আসবাবের দাম আকাশছোঁয়া। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে থাকবে বলে মনে হচ্ছে।’
ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন প্রবেশ ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শনার্থীদের অনেকে। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি থেকে ঘুরতে আসা সোহেল রানা বলেন, ‘জনপ্রতি ৫০ টাকা করে টিকিটের দাম বেশি মনে হচ্ছে। আরেকটু কমালে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য আরও ভালো হতো। অনলাইন আর স্বশরীরের উভয় পদ্ধতিতে ভোগান্তির কারণে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কমবে। কারণ তারা দর্শনার্থীদের জন্য টিকিট কাউন্টারে পর্যাপ্ত লোকবল রাখেনি।’
বাণিজ্য মেলার পরিচালক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব বিবেক সরকার বলেন, ‘সরকারি ছুটির দিন আজ (শুক্রবার) উপস্থিতি মোটামুটি হয়েছে। এখনও অনেকে স্টল প্রস্তুত করছে বলে সব পণ্যের সমাহার পাচ্ছে না আগতরা। আগামী দুই দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি, মেলায় নতুনত্ব আর শৃঙ্খলা উপভোগ করবে দর্শনার্থীরা।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজবাউল হুদা বলেন, ‘এবার প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন ১০০টি, বিদেশি প্যাভিলিয়ন ৮টি, জেনারেল স্টল, ফুডকোর্ট, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল প্রায় ১৭০টি। এ ছাড়া মূল প্যাভিলিয়নের বাইরে খোলা স্থানে আরও ১২ থেকে ১৫টি ফুড স্টল রয়েছে। এবারও বাণিজ্য মেলায় ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। বিদেশি ৮টি স্টলে তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। রপ্তানিতে দেশীয় পণ্যের উন্নত দেশের সঙ্গে যোগাযোগ, সম্পর্ক আর প্রদর্শনের মূল উদ্দেশ্য সফল করতে কাজ করছি।’