শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:১০ পিএম
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:০৬ পিএম
প্রতীকী ছবি
মাদারীপুরের শিবচরের ধর্ষণ-গর্ভপাতের ন্যায়বিচার না পাওয়ায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় কথিত প্রেমিক, প্রধান সালিশীকারী ইউপি সদস্যসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মেয়েটির পরিবার।
মেয়েটির বড় ভাই নাসির মোল্লা বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাতে শিবচর থানায় মামলাটি করেছেন বলে জানিয়েছেন শিবচর থানার ওসি মো. মোক্তার হোসেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের চাঁনমিয়া মোল্লার মেয়ে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী হাফিজা আক্তার। তার সঙ্গে প্রতিবেশী আবুল কালাম সরদারের বড় ছেলে পিয়ার সরদারের দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল। একপর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। একবার ওই ছাত্রী গর্ভপাত করেছেন বলেও মেয়েটির পরিবার দাবি করেন। এ নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে স্থানীয়ভাবে সম্প্রতি সালিশ দরবার হয়। সালিশে অভিযুক্ত পিয়ার নিজের দোষ অস্বীকার করেন। তবে পিয়ারের ছোট ভাই আলী সরদার নিজেকে হাফিজার প্রেমিক ও দোষী বলে দাবি করেন এবং তাকে বিয়ে করতে চান। কিন্তু হাফিজা আলীকে বিয়ে করতে রাজি ছিল না, সে পিয়ারকে বিয়ের করার কথা বলেন।
আরও জানা গেছে, একদিকে প্রেমের সর্ম্পক প্রেমিক অস্বীকার করা অন্যদিকে পরিকল্পিতভাবে তার ছোট ভাইকে দিয়ে সব দোষ স্বীকার করার কারণে কয়েকদিন ধরেই অন্যমনস্ক ছিল হাফিজা। এ ঘটনায় রাগে- অভিমানে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ ঘরে ফাঁস দেয় সে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে রয়েছে পিয়ারের পরিবার। স্থানীয়দের অভিযোগ পিয়ার সম্প্রতি বিদেশ যাওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণেই পিয়ারের পরিবার স্থানীয় সালিশে ছোট ভাই আলীকে দোষী দাবি করায়।
নিহতের ভাই সজীব মোল্লা বলেন, ‘আমরা এলাকায় ন্যায়বিচার পাইনি। আমার বোনের সম্পর্ক ছিল পিয়ারের সঙ্গে। অথচ সালিশে সবাই মিলে বিয়ে দিতে চেয়েছে অভিযুক্তের ছোট ভাই আলীর সঙ্গে। এ কারণেই আমার বোন আত্মহত্যা করেছে। এই হত্যার ন্যায়বিচার চাই।’
স্থানীয় মাহবুব হোসেন বলেন, ‘পিয়ারের সঙ্গে হাফিজার সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে সালিশ বসলে সেখানে পিয়ার সব অস্বীকার করে। কারণ পিয়ার কিছুদিনের মধ্যে বিদেশ চলে যাবে। তবে পরিকল্পিতভাবে পিয়ারের ছোট ভাই আলী নিজেকে দোষী দাবি করে হাফিজাকে বিয়ে করতে চায়। সালিশে যারা ছিল তারাও সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে আলীকে বিয়ে করতে বলে। এতে মেয়েটি অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’
শিবচর থানার ওসি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘নিহত হাফিজার সঙ্গে পিয়ার সরদার নামে একজনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পেরেছি। এখানে ধর্ষণের মত কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না তা ময়নাতদন্তে রিপোর্ট পেলে বুঝা যাবে। এ ব্যাপারে প্রধান সালিশীকারী ইউপি সদস্যসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মেয়েটির পরিবার।’