চট্টগ্রাম খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতি
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৪ পিএম
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৬ পিএম
চট্টগ্রাম খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে ২৩ দিনেও জটিলতা কাটেনি। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও শ্রম অধিদপ্তর। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (এডিএম) নির্দেশনায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তিন সভাপতি প্রার্থী সশরীরে উপস্থিত নিশ্চিত করে ফলাফল ঘোষণার নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনা বাস্তবায়নে শ্রম অধিদপ্তরকে ইতোমধ্যে লিখিত পত্র দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক ও রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়নস-এর কাছে গত ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এডিএম সৈয়দ মাহবুবুল হক স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে সেই পত্রে উল্লেখ ছিলÑ ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয় হতে প্রাপ্ত প্রতিবেদন ও চট্টগ্রাম মহানগর পিপির মতামতের ভিত্তিতে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তিনজনের সশরীরে উপস্থিতিতে নির্বাচনী উপ-পরিষদকে ভোট গণনাপূর্বক ফলাফল ঘোষণা করার নিমিত্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদন ও মতামত প্রেরণ করা হলো।’
পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে একইভাবে পত্র পাঠান চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক গিয়াস উদ্দিন।
নিদের্শনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব আলী খান। তিনি বলেন, প্রার্থীদের সশরীরে উপস্থিত থেকে ফলাফল ঘোষণার নির্দেশনাটি পেয়েছি। শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সব সদস্য নিয়ে বসব। এরপর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।
তবে কবে নাগাদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি সঠিক কোনো দিনক্ষণ বা সম্ভাব্য তারিখ জানাননি।
নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এস এম আবুল মনছুর বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও গণহত্যা মামলার আসামি সৈয়দ মাহমুদুল হককে বিজয়ী করতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে জটিলতা তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশনার। বিষয়টি চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনকে অবহিত করেছি। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও শ্রম অধিদপ্তর যেই নির্দেশনা দিয়েছেন সেই অনুসারে দ্রুত সময়ের মধ্যে সশরীরে উপস্থিত থেকে ফলাফল ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সৈয়দ মাহমুদুল হক বিদেশে পালিয়েছে। গত ১৫ বছর ধরে এই খাদ্য অধিদপ্তরকে তিনি লুটেপুটে খেয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও অনিয়ম করে প্রার্থী হয়ে তিনি আবারও সভাপতি হতে চান। তাই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে গড়িমসি করছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতি চট্টগ্রামের নির্বাচন গত ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১৮টি পদে মোট ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ৪৫০ জন ভোটারের মধ্যে ৪১৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ ছাড়াও নির্বাচনে যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও খাদ্য অধিদপ্তরের ‘মাফিয়া খ্যাত’ সৈয়দ মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্যানেল এবং এস এম আবুল মনছুরের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত প্যানেলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
কিন্তু নির্বাচনের দিন গত ৩০ নভেম্বর বিকাল ৪টায় সমিতির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হলেও ভোর ৪টায়ও ফলাফল ঘোষণা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। পরে বিএনপি-জামায়াত প্যানেলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলে ফলাফল ঘোষণা বন্ধ ও ভোট পুনর্গণনার দাবিতে লিখিত অভিযোগ করেন সভাপতি প্রার্থী এসএম আবুল মনসুর। পরবর্তীতে সভাপতি প্রার্থীদের উপস্থিতিতে ভোট গণনার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেন বিএনপি-জামায়াত প্যানেলের প্রার্থীরা। অন্যদিকে, আবুল মনসুরের বিরুদ্ধে ব্যালটবাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগপন্থি প্রার্থীরা। এই জটিলতা নিয়ে নির্বাচনের ২২ দিন পার হলেও এখনও ফলাফল ঘোষণা করতে পারেনি কমিশন।