দিনাজপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৪ পিএম
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৯ পিএম
হাড়কাঁপানো শীতে জবুথবু অবস্থা দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের জনজীবনের। শীতের তীব্রতার সঙ্গে বেড়েছে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা। শীতজনিত নানান রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেন ও সড়কে যানবাহন দিনেই হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। ক্ষতি হচ্ছে ফসলেরও। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীত থেকে বাঁচতে বেড়েছে শীতবস্ত্র-গরম কাপড়ের চাহিদা।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। যা দিনাজপুরে এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
অন্যদিকে পঞ্চগড় জেলার তেুঁলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। এছাড়াও ঠাকুরগাঁয়ে ৯ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি, রংপুরে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১০ ডিগ্রি, নীলফামারীর ডিমলায় ১১ ডিগ্রি, লালমনিরহাটে ১০ ডিগ্রি ও গাইবান্ধায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন আমাদের জানিয়েছেন, দু-তিনদিন তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে এরপর আরও কমবে। এ মাসের ৬ অথবা ৭ তারিখে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। কেউ কেউ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
শহরে ‘মানুষ বেচা হাট’ বলে খ্যাত ষষ্টিতলা এলাকার শ্রম বাজারে কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিকদের কাজ না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
দক্ষিণ কোতয়ালি এলাকার ষাটোর্ধ বয়সের আমিনুল উসলাম কাজের সন্ধানে এসে দুপুর পর্যস্ত বসেই আছে। কোনো কাজ না থাকায় খালি হাতে বাড়িও ফিরতে পারছেন না তিনি।
আমিনুল জানালেন, ‘বাপু এই ঠান্ডাত শরীরটা কাঁপি উঠেছে। তারপরও সকাল বেলাতেই আইছো। কিন্তু কোনো কাম কাইজ নাই। খামো কী বা? হামার গরীবের বাঁচিবার কোনো উপায় নাই।’
বিরল উপজেলার পলাশবাড়ী এলাকা থেকে কাজের সন্ধানে আসা মনসুর আলীও জানান, ‘কাজ না থাকায় খুবই সমস্যায় পড়ছেন। বাড়িও ফিরতে পারছেন না। বাড়ি গেলে কিছু বাজার করে তো নিতে হবে। কিন্তু টাকা তো নেই।’
অন্যদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় সঙ্গে দিনাজপুরে শুধু অভিজাত বিপণী-বিতান নয়, হকার্স মার্কেট, ফুটপাতেও বেড়েছে গরম কাপড় কেনা-বেচার ধুম।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৫৮ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও কিছু শীতবস্ত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু শীতার্ত মানুষের অভিযোগ তারা কোনো শীতবস্ত্র পায়নি। তারা গরম কাপড়ের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।