নূর-ই-আলম চঞ্চল, শেরপুর
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৪৬ এএম
গারো পাহাড়ে ঘেরা শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় এক সময় কাসাভা আলু ছাড়া কিছুই উৎপাদিত হতো না। এখন সেখানে আনারস চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাকাকুড়া এলাকার আশরাফুল আলমের আনারসের ক্ষেতে। প্রবা ফটো
পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে বিক্রি, পাথর ভাঙা, লাল বালু তোলার শ্রমিকের কাজ করে অধিকাংশের জীবিকা নির্বাহ করতে হতো যে এলাকার বেশিরভাগ মানুষকে; যে এলাকায় কাসাভা আলু চাষই ছিল কৃষকের একমাত্র ভরসা, এখন সেসব এলাকার পরিশ্রমী কৃষকদের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে আনারস চাষ। কৃষকদের দাবি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং বন্য হাতির আক্রমণ ঠেকাতে পারলে মধুপুরের পর শেরপুরের গারো পাহাড়ের কয়েক হাজার হেক্টর পতিত জমি হতে পরে আনারস চাষের উজ্জ্বল ক্ষেত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ৪০ কিলোমিটারব্যাপী সীমান্তজুড়ে রয়েছে গারো পাহাড়। এসব পাহাড়ি এলাকায় কয়েকশ হেক্টর ভূমিতে একমাত্র কাসাভা আলু ছাড়া আর কোনো আবাদ করা হতো না বললেই চলে। স্থানীয় বাজারে কাসাভার চাহিদা কম থাকায় এবং চাষ তেমন লাভজনক না হওয়ায় অধিকাংশ জমি প্রায়ই অনাবাদি পড়ে থাকত। ফলে অভাব-অনটনে পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে বিক্রি, পাথর ভাঙা, লাল বালু তোলার শ্রমিকের কাজ করে অধিকাংশের জীবিকা নির্বাহ করতে হতো। এখন নতুন নতুন ফসল উৎপাদন করে এসব পাহাড়ি জনপদের কৃষিতে বিপ্লব এনে দিয়েছে এলাকার কৃষকরা।
উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের কৃষক জমশন ম্রং চার বছর আগে তার বাড়ির পাশের ১৮ বিঘা পতিত পাহাড়ি জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন আনারস চাষ। এতে সাফল্যও পেয়ে যান তিনি। হাতির আক্রমণে ক্ষতির পরেও ১৬ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করেন তিনি। অনেকেই তার আনারস বাগান দেখতে এসে নিজেরাও চাষ করতে আগ্রহী হন। ইতোমধ্যেই ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ি উপজেলায় আনারস চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষক আশরাফুল আলম বাকাকুড়া এলাকায় তার ১৮ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছেন। গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রের পাশেই ৩ বিঘা করে জমিতে আনারস চাষ করেছেন কৃষক জমশন ম্রং ও রিথাওই ম্রং। সারি সারি আনারস গাছে ইতোমধ্যে আনারসের কলি এসেছে। বন্য হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় জমিতে সোলার ফেন্সিং ও বায়ু ফেন্সিং বেড়া দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে পাকা আনারস বাজারে বিক্রির আশাও করছেন তারা।
চাষি জমশন ম্রং জানান, এক লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছেন। মাঠে আনারসের ফলন দেখে সব খরচ উঠিয়ে ৩ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
পশ্চিম বাকাকুড়া এলাকার আশরাফুল আলম বলেন, এবার ১৮ বিঘা জমিতে দেড় লাখ জলডুবি আনারস চাষ করেছি। এই আনারস খুবই সুস্বাদু এবং চাষ লাভজনক হওয়ায় আশপাশের অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন। আরেক চাষি সুব্রত বলেন, দুই বছর যাবৎ জলডুবি আনারস চাষ করছি। আশা করছি গতবারের মতো এবারও ভালো ফলন পাব।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মুহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী এলাকার মাটি ও আবহাওয়া আনারস চাষের উপযোগী হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা আনারস চাষে আগ্রহী হচ্ছে। ঝিনাইগাতীর আবাদ দেখে নালিতাবাড়ী এবং শ্রীবরদীতেও এখন আনারসের চাষ হচ্ছে। এতে অনাবাদি শত শত হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসাসহ লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।