রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:২৮ এএম
অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন।
মেয়াদকালীন অর্থ সঞ্চয় করতে গিয়ে ভুয়া সঞ্চয়পত্র, ভুয়া চেক ও জাল স্বাক্ষরের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন সহস্রাধিক গ্রাহক। গত চার বছরে গ্রাহকদের ১০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর কার্যালয়ের উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন। এ ঘটনায় আনোয়ারকে আসামি করে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা প্রতারণা ও চেক জালিয়াতির অভিযোগে আদালতে তিনটি মামলা করেছেন। মামলাগুলো পিবিআই ও জেলা ডিবি অফিস কর্তৃক তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা ডাকঘর সূত্রে জানা গেছে, রামগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নরিমপুর গ্রামের বাঁশয়ালা বাড়ির মৃত আবু সাইদের ছেলে আনোয়ার হোসেন উপজেলা ডাকঘর অফিসে উদ্যোক্তা হিসেবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করেন। এর কয়দিন পর আনোয়ার ব্যাংক এশিয়ার অনুমতিক্রমে ডাকঘর অফিসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে সহস্রাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করেন। আনোয়ার গ্রাহকদের ডাকঘর অফিস থেকে মেয়াদকালীন সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ ডিপোজিট খোলার জন্য উৎসাহ দেন।
ফাতেমা আক্তার নামে একজনের অভিযোগ, অনেক গ্রাহক লোভনীয় প্রস্তাবে প্রলুব্ধ হয়ে আনোয়ারের কাছে মোট ১৫ লাখ টাকা জমা রাখেন। আনোয়ার লক্ষ্মীপুর ডাকঘর অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র এবং চেকের ফটোকপি এনে গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া ইয়াছমিন আক্তারের কাছ থেকে ৪ লাখ, রাবেয়া বেগম নামের এক গৃহবধূর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এভাবে প্রায় ৫০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ।
গ্রাহকরা অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিন পোস্ট অফিসসহ ব্যাংক এশিয়ার রামগঞ্জ শাখায় ছুটে আসেন। কিন্তু সেখানে এসে তারা আরও হতাশ হন। কারণ তারা জানতে পারেন অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাই জমা হয়নি। আনোয়ারের দেওয়া সঞ্চয়পত্রের ফটোকপি, চেকের ফটোকপি কোনোটাই আসল নয়। গ্রাহকদের ধারণা, আনোয়ারের সঙ্গে রামগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর ডাকঘর অফিসের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত।
গত বছরের ডিসেম্বরে আনোয়ার নিরুদ্দেশ হলে বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ পায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সঞ্চয়পত্রের টাকা গ্রহণকালে প্রিন্ট ভাউচার দেওয়ার নিয়ম থাকলেও আনোয়ার দিয়েছেন হাতে লেখা কাগজের টুকরো।
আনোয়ার হোসেন নিরুদ্দেশ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে। পরে খুদেবার্তা পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
রামগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল বাশার জানান, এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। আদালতের মামলার প্রেক্ষিতে থানায় কোনো ওয়ারেন্টের কপিও হাতে পাইনি। কোনো গ্রাহক এ নিয়ে অভিযোগ কিংবা আদালতের ওয়ারেন্টের কপি থানায় পেলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।