অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:১৮ এএম
কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর সীতারঘাট। এই ঘাটেই গত পাঁচ বছরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
ষাটের দশকে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীকে বিচ্ছিন্ন করে কাপ্তাই বাঁধ। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাপ্তাই থেকে বিচ্ছিন্ন কর্ণফুলী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। জোয়ার-ভাটায় কর্ণফুলী নদীতে ডুবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাড়ছে মৃত্যু। গত ৫ বছরে নদীটিতে ডুবে প্রাণ গেছে ১১ জনের। স্থানীয়রা জানান, নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর দূর-দূরান্ত থেকে কাপ্তাই উপজেলায় ছুটে আসে অনেক পর্যটক। এসব পর্যটকের অধিকাংশই কর্ণফুলী নদীতে নৌকায় ভ্রমণ করে থাকে। তাদের মধ্যে তরুণ পর্যটকের সংখ্যা থাকে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু প্রায় প্রতি বছরই কর্ণফুলী নদীর কাপ্তাই উপজেলা অংশে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে কাপ্তাই উপজেলায় বেড়াতে এসে কর্ণফুলী নদীতে ডুবে অন্তত নয়জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নদীতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় আরও দুই বাসিন্দার। এর মধ্যে ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে আসা একটি পর্যটকবাহী নৌকা কাপ্তাই কয়লার ডিপো ঘাটে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়। সেখানে নৌকায় থাকা টুম্পা মজুমদার (৩০), বিজয় মজুমদার (৫) ও দেবলীনা দেসহ (১০) তিনজন যাত্রী একই দুর্ঘটনায় মারা যান। ২০২১ সালের ২৯ মে কাপ্তাইয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে কর্ণফুলী নদীর সীতার ঘাট অংশে ডুবে মারা যান চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র তন্ময় দাশ (১৯)। ২০২২ সালের ১১ মে কাপ্তাইয়ে বেড়াতে এসে নদীতে ডুবে মারা যান কলেজছাত্র লোকেশ বৈদ্য (১৯) ও তার বন্ধু অপূর্ব সাহা (১৮)। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল কাপ্তাইয়ে চিৎমরম নদীর ঘাটে গোসলে নেমে জয় কান্তি দে (১৩) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ২০২২ সালে মাছ ধরতে গিয়ে চিৎমরম ঘাটে মৃত্যু হয় স্থানীয় বাসিন্দা উসালা মারমার (৩৪)। ২০২৩ সালে ১১ মে কাপ্তাইয়ের ব্যাঙছড়ি মুসলিম ঘাটে খেলতে গিয়ে নদীতে পড়ে মৃত্যু হয় রিয়াদুল ইসলাম (৪) নামের এক শিশুর। সবশেষ ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর কাপ্তাইয়ে বেড়াতে এসে কর্ণফুলীর সীতারঘাটে ডুবে মারা যান দুই পর্যটক প্রিয়ন্ত দাশ (১৭) ও শাওন দত্ত (১৭)।
জানতে চাইলে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা কাজী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কর্ণফুলীতে ডুবে যাওয়ার ঘটনা অনুসন্ধান করে জানা যায়, মৃতরা কেউ সাঁতার জানতেন না। বিশেষ করে কাপ্তাইয়ে যারা ঘুরতে আসেন, কর্ণফুলী নদী সম্পর্কে তাদের কোনো সচেতনতা না থাকায় এবং সাঁতার না জানায় এসব দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া নদীর কাপ্তাইয়ের অংশে কিছু নীরব স্থানে বাইরে থেকে আসা পর্যটক নৌকায় এসে মাদক সেবন করেছেনÑ এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। মাদক সেবন করার পর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নদীতে নেমে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলীতে যে পর্যটকবাহী নৌকাগুলো আছে, তাতে লাইফ জ্যাকেটের মতো কোনো ব্যবস্থাও নেই। ফলে প্রতিনিয়ত এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে সচেতনতামূলক বিলবোর্ড স্থাপন করে পর্যটক ও স্থানীয়দের সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখতে হবে।