চট্টগ্রাম আদালতে সংঘর্ষ
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:৪৪ পিএম
চট্টগ্রামে আদালত এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। নতুন এই মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক দুই কাউন্সিলর ও নারী নেত্রীসহ দলটির ২৯ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আগের মামলায় গ্রেপ্তার ১২ আসামির ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বুধবার মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী নামে সাতকানিয়ার এক বাসিন্দা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে সাবেক কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, শৈবাল দাস সুমন ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী জিনাত সোহানা চৌধুরীর নামও আছে। মামলায় এ তিনজনকে অর্থদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি আসামিদের মধ্যে আছেন প্রবীর চন্দ্র পাল, শুভ কান্তি দাস, মিঠুন, বিজয় সমীর কান্তি দে, মোতালেব, সাদমান ফুয়াদ, মিরসরাইয়ের আব্দুল কাইয়ুম নিজামী, সীতাকুণ্ডের আবেদিন আল মামুনসহ অনেকে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ২৬ নভেম্বর বিকালে আসামিরা তাকে শিবির উল্লেখ করে ধাওয়া দিলে প্রাণভয়ে তিনি রঙ্গম কনভেনশনের গলিতে চলে যান। এ সময় এজাহারভুক্ত ২৯ জনসহ ৪০-৫০ জন তাকে ঘিরে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে। তাদের সহযোগিতায় তিনি বাসায় চলে যান। পরে অসুস্থবোধ করলে ২৭ নভেম্বর পরিবারের সদস্যরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করায়।
আদালত এলাকার সংঘর্ষের ঘটনায় গতকালেরটি নিয়ে এখন পর্যন্ত ৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় দুই হাজার তিনশ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলা করেছে পুলিশ, দুটি মামলা করেছেন হত্যার শিকার আইনজীবী আলিফের বাবা ও ভাই, সর্বশেষ মামলাটি করেছেন মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী। আগের ৫ মামলায় মোট ৩৯ জনকে গেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১২ জনকে গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে আদালত তাদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেনÑ জয় নাথ, রুমিত দাস, নয়ন দাস, গগন দাস, সুমিত দাস, আমান দাস, বিশাল দাস, সনু মেথর, সুমন দাস, রাজেশ দাস, দুর্লভ দাস ও অজয় সূত্রধর চৌধুরী। এর আগে ২ ডিসেম্বর পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ৮ জন আসামির ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।
এদিকে গতকাল সকালে নিহত আইনজীবী আলিফের কবর জিয়ারত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সদস্য অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), অ্যাডভোকেট বদরুল আনোয়ার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আরশাদুর রউফ, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির মঞ্জু, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রেজা, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলনসহ ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল। পরে বিকালে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির শোকসভায় অংশ নেন তিনি।
গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে আদালতে তোলাকে কেন্দ্র করে সেদিন দিনভর চট্টগ্রাম আদালতপাড়া ছিল উত্তপ্ত। আদালত চিন্ময়ের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান আটকে দেয় আদালতে সমাবেত হওয়া সনাতনীরা। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। এরপর লাঠিচার্জ শুরু করলে আদালত চত্বর থেকে নামার পথে ভাঙচুর চালায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা। একপর্যায়ে আদালত ভবনের মসজিদের সামনে আইনজীবী ও কিছু সাধারণ মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে তাদের। আদালত ভবনের বিপরীত পাশে হরিজন কলোনির ভেতর রঙ্গম কনভেনশন সেন্টারের সামনে থেকে আইনজীবী আলিফসহ সাতজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।