ময়মনসিংহ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:১৮ পিএম
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:২৯ পিএম
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার গাবতলী এলাকার সত্তর বছরের বৃদ্ধা খোদেজা খাতুন। স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। সন্তানরাও রয়েছে নিজেদের মতো। তিনি ১০ টাকা নিয়ে বাপের বাড়ি নেত্রকোণার উদ্দেশে বেরিয়েছেন। লোকাল ট্রেনে যাবেন নেত্রকোণায়। কিন্তু সকাল থেকে ট্রেনের জন্য তিনি রেলওয়ের জংশন প্ল্যাটফর্মে বসা।
রেল স্টাফদের কর্মবিরতিতে লোকাল ট্রেন বন্ধ খবরটি তার জানা ছিল না। তার সাথে বসা আরেক যাত্রী সোলেমা খাতুন যাবেন নেত্রকোণার জারিয়া। তারও জানা ছিল না লোকাল ট্রেন বন্ধের কথা। এখন কীভাবে যাবেনÑ এ প্রশ্ন উভয়েরই।
মাইলেজ বন্ধের প্রতিবাদে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে বন্ধ ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব লোকাল ট্রেন। এতে খোদেজা, সোলেমা খাতুনের মতো লোকাল ট্রেনের শত শত যাত্রী পড়েছেন দুর্ভোগে। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রেলওয়ে জংশনে গিয়ে এসব চিত্র দেখা যায়।
জানা যায়, রেলওয়ের ১৮৩২ সালের আইন অনুযায়ী ট্রেনচালক, সহ-চালক, পরিচালক ও টিকিট চেকারদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এ জন্য তাদের দেওয়া হয় বিশেষ আর্থিক সুবিধা, রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। সেই মাইলেজ বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল রেলওয়ের রানিং স্টাফদের তৃতীয় দিনের মতো চলেছে কর্মবিরতি। ট্রেন পরিচালনায় রানিং স্টাফ-এলএম গার্ড ও টিটি সংকটে ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোণার জারিয়া, মোহনগঞ্জ ও জালামপুরের দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে লোকাল ট্রেন চলাচল ১ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। গতকালও রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি থাকায় ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৮ জোড়া লোকাল ট্রেন এবং ঢাকা দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে ভাওয়াল মেইল ট্রেন চলাচল করেনি।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৬০ বছরের বেশি সময় মাইলেজ সুবিধা চালু ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের থেকে মাইলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এর আগে নিয়োগপ্রাপ্তরা এখনও মাইলেজ সুবিধা পেলেও ২০২১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের পেনশন ও আনুপাতিক পার্ট অব পে মাইলেজ সুবিধা বাতিল করা হয়। বৈষম্যমূলক এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে চলছে কর্মবিরতি।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশনের সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খান বলেন, রানিং স্টাফদের মাইলেজ বন্ধের প্রতিবাদে কর্মবিরতি চলায় জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও জামালপুর রেলপথে সকল লোকাল ট্রেন বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ হচ্ছে, এরপরও কিছু করার নেই।