× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কক্সবাজার সৈকতে ‘রোবট দানব’, দিচ্ছে প্লাস্টিক দূষণের বার্তা

কক্সবাজার অফিস

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৫০ পিএম

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৪ পিএম

কক্সবাজার সৈকতে ‘রোবট দানব’, দিচ্ছে প্লাস্টিক দূষণের বার্তা

দূর থেকে মনে হবে একটি রোবট। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা ও সীগাল পয়েন্টের মাঝামাঝি বালিয়াড়িতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা রোবটটির কাছে গেলে ধরা দেবে দৈত্যাকার এক দানব হয়ে। আদতে এটি প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি একটি ভাস্কর্য। সৈকতে বোতলসহ কুড়িয়ে পাওয়া পরিত্যক্ত নানা প্লাস্টিক দিয়ে বেলাভূমিতে একদল স্বেচ্ছাসেবীর বানানো রক্ত-মাংসহীন প্রতীকী এ ভাস্কর্যের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রোবট দানব’। সমুদ্র ও প্রকৃতিতে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা রোধে সচেতনতা তৈরিতেই নির্মিত হয়েছে দৈত্যাকার এ ভাস্কর্য।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত আকাশছোঁয়া রোবটটি সমুদ্র সৈকতে প্রদর্শিত হচ্ছে; যেটিকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্লাস্টিক ভাস্কর্য বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির বিরূপতার সাক্ষ্য দিচ্ছে।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়ামিন হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী, ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা কমিটির সদস্য জামাল উদ্দিন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি দিনই সমাগম ঘটে লাখো পর্যটকের। এ সব পর্যটক অসচেতনভাবে সমুদ্র সৈকতে ব্যবহৃত নানা প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলছে। এতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ এবং হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও প্রাণপ্রকৃতি। এ দূষণ রোধে এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সাগরে ফেলা ক্ষতিকর প্লাস্টিক দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি ও প্রদর্শনীর ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, ‘প্লাস্টিক যে দানবের মতো সমুদ্র ও জনজীবন ধ্বংস করছে এবং ক্রমাগত বাড়তে থাকা এই ভয়াবহতা যে দ্রুতই রুখে দিতে হবে; এই সতর্কতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই ভাস্কর্য প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষ প্লাস্টিক ব্যবহারের আরও সতর্ক হবেন বলে আশা করেন তিনি।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা কমিটির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সরকারের পলিসির সঙ্গে সমন্বয় করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫০০ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে করে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারি খরচ যেমন কমবে, তেমনি মানুষও জানতে পারবে কীভাবে রিসাইকেলের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রুপান্তর করা যায়।’

দেশব্যাপী এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় ৪ মাস প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কাজ করে যাবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেলের পাশাপাশি এখানে সচেতনতামূলক ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এ ছাড়া সৈকতের সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে প্লাস্টিক এক্সেচেঞ্চ সেন্টার। যেখানে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়ে স্থানীয়রা নিত্যপণ্য সংগ্রহ এবং পর্যটকরা নানা উপহার সামগ্রী পাচ্ছেন।

ভাস্কর্যটি নির্মাণে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের আটজন শিল্পী এবং ২০ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল।

দলনেতা ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার জানান, ভাস্কর্যটিতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন কাঠ, পেরেক ও আঠা।

তিনি দাবি করেন, এটি ‘ওসান প্লাস্টিক’ দিয়ে তৈরি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘রোবট দানব’। এটির উচ্চতা ৬২ ফুট। এটি বানাতে প্রায় ১০ টন প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। পাশে রয়েছে ১৫ ফুট উচ্চতার ছোট আকৃতির আরও দুইটি দানব রোবট। 

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক বলেন, প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফের সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকত থেকে অন্তত ১০ টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ সব বর্জ্য দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এ ‘প্লাস্টিক দানব তৈরি করা হয়েছে।

বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়দের মাঝে প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ জানিয়ে তিনি বলেন, এটি পুরো পর্যটন মৌসুমে প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ভাস্কর্যটিকে কেন্দ্র করে এখানে প্লাস্টিক দূষণবিরোধী সচেতনতামূলক নানা পথনাটক ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

প্লাস্টিকের বিনিময়ে চাল-ডালসহ নানা পণ্য

আয়োজকরা জানিয়েছেন, গত ৭ নভেম্বর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ ও স্থানীয়দের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ মার্কেট’ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।

সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া খালি পাত্র, বোতল ও পলিথিনের প্যাকেটের বিনিময়ে যে কেউ নিতে পারবেন চাল, ডাল, তেল, চিনি ও লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এবং পর্যটকরা জিতে নিবেন বই, কলম, ক্যাপ ও ব্যাগসহ বিভিন্ন উপহার। এ কার্যক্রম থেকেই মূলত ১০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা