আংগারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়
শরীয়তপুর প্রতিবেতক
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৬ পিএম
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯ পিএম
শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। হাতের স্পর্শেই খুলে পড়ছে পলেস্তারা। কোথাও আবার দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এই ভবনে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের কার্যক্রম।
শিক্ষা বিভাগ বলছে, ভবনটিতে দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও মেলেনি কোনো সুরাহা। দীর্ঘদিন এমন বেহাল দশা তৈরি হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের দাবি, এখানে দ্রুত নতুন ভবন নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হোক।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৭ সালে আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১০ জন শিক্ষক ২৩১ শিক্ষার্থী রয়েছে। শুরুর দিকে একটি আধাপাকা ভবন থাকলেও ১৯৮৯ সালে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের দেয়াল ও ছাদে হাতের স্পর্শেই খুলে পড়ছে পলেস্তারা। কোথাও আবার দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। বইয়ের ওপর ছাদ থেকে খসে পড়ছে বালু সিমেন্টের পলেস্তারা। বিমের পলেস্তারা খসে পড়ে মরিচাধরা রড বের হয়ে আছে।
খুদে শিক্ষার্থীরা একটি কক্ষে পাঠ নিচ্ছে। আর তাদের ওপরে ওই কক্ষের বিমের পলেস্তারা খসে খসে পড়ে ভেতর থেকে রড বের হয়ে আছে। এ ছাড়া আরেকটি কক্ষের বিমে রয়েছে বড় ধরনের ফাটল। বৃষ্টির ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে বলে জানায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তনুশ্রী বিশ্বাস পিউ নামের এক খুদে শিক্ষার্থী বলে, আমাদের স্কুলটির ওপর দিক দিয়ে ভাঙা। বর্ষাকালে পানি পড়ে, বালু পড়ে। ক্লাস করতে ভয় পাই। আমরা চাই আমাদের জন্য নতুন স্কুল করা হোক।
জরিনা খাতুন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলে, যখন ক্লাস করি তখন অনেক সময় ওপর থেকে বালু আর ইটের কণা পড়ে। গতকালও আমার মাথায় খোয়া পড়েছে। এভাবে ক্লাস করা আমাদের জন্য খুবই কষ্টের ও ঝুঁকির। সরকার যেন আমাদের একটি বিদ্যালয় ভবন করে দেয়।
অভিভাবক রেহানা আক্তার বলেন, আংগারিয়া স্কুল ভবনের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ওপরে ফাটল ধরেছে, রড বের হয়ে গেছে, আর বৃষ্টিতে পানি পড়ে। এ অবস্থায় আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠালে ভয়ে থাকি কখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
সহকারী শিক্ষক আসমা আকতার বলেন, আমাদের ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক। আমরা ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারছি না। এর আগে ওপর থেকে ছাদ ভেঙে ফ্যান পড়ে যায়। এতে আমরা আতঙ্কে থাকি। এ ছাড়া বৃষ্টির পানি পড়ায় ক্লাস নিতে পারি না। বাচ্চাদের বই-খাতা ভিজে যায়, ক্লাসরুম ভিজে যায়।
ইউনূস শেখ নামের আরেক শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের মাঝে ক্লাস করতে হয় বলে পড়ায় মনোনিবেশ থাকে না। আমাদের বিদ্যালয়ের পড়ার পরিবেশ ভালো থাকলেও ভবনের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিষয়টি বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও সমাধান হচ্ছে না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল হাসান বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া রয়েছে। এগুলো সব একটি ডেটাবেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যখন বরাদ্দ আসে তখন আমরা সহযোগিতা করি এবং কাজ শুরু হয়ে যায়। স্কুলটিতে বরাদ্দ এসেছিল বলে শুনেছি। তবে সেটি কী কারণে বাতিল হয়েছ, তা দেখব। পাশাপাশি নতুন বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে।