নাটোর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৫ পিএম
নাটোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে চন্দ্র প্রামাণিক পুকুরের একাংশ দখল করে লাগানো হয়েছে কলাগাছ। সম্প্রতি তোলা
আইন অমান্য করে নাটোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী ‘চন্দ্র প্রামাণিক পুকুর’ দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে কৌশলে রানী ভবানীর আমলের পুরোনো পুকুরটির অর্ধেক অংশ ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে মফিউর রহমান দুদু নামে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন মাহফুজ উদ্দিন হেলাল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা। তবে দখলের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। আর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের কাপুড়িয়া পট্টি নববিধান স্কুলের পেছনে ও কানাইখালি শিল্পকলা একাডেমি এবং কাপুড়িয়া পট্টি সংযোগ সড়কের পাশে খনন করা পুকুরটি গুগল ম্যাপে ‘চন্দ্র প্রামাণিক পুকুর’ নামে দেখা যায়। ১ একর ৬২ শতক আয়তনের পুকুরটির মালিক ছিলেন বিশ্বনাথ চন্দ্র নাথ। জনশ্রুতি রয়েছে, ওই এলাকায় বসবাসরত অভিজাত ও বিশিষ্ট হিন্দু পরিবারের লোকজন দৈনন্দিন কাজে পুকুরটি ব্যবহার করত। দেশভাগের সময় তারা সব সম্পত্তি অবিক্রিত রেখে ভারতে চলে যায়। এরপর থেকেই দীর্ঘসময় ধরে স্থানীয়রা পুকুরটি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে আসছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুকুরটির দক্ষিণের অর্ধেক অংশে (যেটিকে প্রস্তাবিত খতিয়ানে পাড় হিসেবে দেখানো হয়েছে) বালুভর্তি জিআই ব্যাগ ও বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। সেখানে কলাগাছও লাগানো হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, মফিউর রহমান দুদু নামে এক ব্যবসায়ী পুকুরটি দখল করে ভরাট করেছেন। এদিকে, পরিবেশ আইন-১৯৯৫ ও জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০-এর বিধানে বলা হয়েছে, যেকোনো জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তিগত পুকুর হলেও তা জলাধারের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তা ভরাট করা যাবে না।
অভিযোগকারী মাহফুজ উদ্দিন হেলাল জানান, আইন অমান্য করে ভূমিদস্যু দুদু পুকুরটি জবরদখল করে ভরাট করেছেন। দুদু জাল দলিল করে জমির মালিকানা দাবি করছেন। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দারা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। অবৈধ দখল ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
তবে অভিযুক্ত দুদু দাবি করেন, পুকুরটি বিশ্বনাথ চন্দ্র নাথ জমিদারি কোম্পানি লিমিটেড নাটোরের পক্ষে লিক্যুইডেটরের (পূর্ণ চন্দ্র শশিভূষণ) নিকট থেকে জায়গাটি ক্রয় করেন তিনি। এ বিষয়ে আদালত তার পক্ষে ডিক্রি প্রদান করেন। এ ছাড়া শুনানিতে এসিল্যান্ড কাজগপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। ওই এলাকায় অন্য বাসিন্দারা আদালতের মাধ্যমে জমির স্বত্ব লাভ করে বসবাস করছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৃষ্ণ চন্দ্র বলেন, ‘পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি, অভিযুক্ত ব্যক্তি জিআই বস্তা দিয়ে পুকুরের পাড় বেঁধেছেন। পুকুরটি আইন অমান্য করে দখল করা হয়েছে কি না, কাগজপত্র দেখলে বিষয়টি জানা যাবে। আইনের ব্যত্যয় হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’