গাজী মো. মাসুদ রানা, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর)
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৩ পিএম
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯ পিএম
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী গ্রামে অবস্থান শতবর্ষী মন্দিরটির। স্থানীয় জমিদার পূর্ণচন্দ্র রায় ১৯০৫ সালে মন্দিরটি নির্মাণ করেন। সাড়ে ৩২ হাত দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ২১ হাত প্রস্থের এক তলা মন্দিরটিতে ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যকলা ফুটে উঠেছে। কালের বিবর্তনে জৌলুশ হারিয়েছে রায় পরিবারের জমিদারবাড়ি।
ভেঙে গেছে প্রাসাদসম পাকা বাড়ি। রায়দের ঐতিহ্য ও সম্পদের সাক্ষী হয়ে শুধু টিকে আছে দুর্গামন্দিরটি। সরেজমিনে দেখা গেছে, মন্দিরের সিঁড়ির আটটি ধাপ। সিঁড়ির দুই পাশে হাতির শুঁড়ের মতো শিল্পকর্ম। চিনামাটির কোসন (থালা) ভেঙে সিঁড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এতে সিঁড়ির সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।
১৮৩৫ থেকে ১৮৪০ সালের কোনো একসময় বরিশালের বাবুগঞ্জ এলাকা থেকে বৃন্দাবনচন্দ্র রায় নামে এক ব্যক্তি মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। প্রথমে চুনের ব্যবসা করতেন। এ ব্যবসা করে অনেক টাকা ও সম্পদের মালিক হন বৃন্দাবন। এরপর তিনি বাড়িতে নারকেল তেলের কারখানা করেন। নারকেল তেল বজরা নৌকায় করে ভারতের কলকাতায় নিয়ে বিক্রি করা হতো। তেলের ব্যবসার সুবাদে বৃন্দাবন রায়ের সঙ্গে ইংরেজ বণিকদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইংরেজদের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে তিনি ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে জমিদারি পত্তন নেন। পিতার মৃত্যুর পর জমিদারি দেখভাল করতেন বৃন্দাবন রায়ের ছোট ছেলে পূর্ণচন্দ্র রায়। ১৯০৫ সালে পূর্ণচন্দ্র রায় বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন এই দুর্গামন্দির।
মিরুখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মো. রোকনুজ্জামান শরীফ জানান, মিরুখালী বাজার, স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ নানা উন্নয়মূলক কাজে জমিদার এ বংশের একটি স্বীকৃত ইতিহাস। রায় বংশের নানা জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড এখনও দৃশ্যমান আছে। কথিত আছে, এ বাড়ির মাটির নিচে মাটির কলসভর্তি প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা আর নানা দামি অলংকার গচ্ছিত ছিল। ওইসব ধন-সম্পদের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও কালের স্থাপনাগুলো এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন নিদর্শন হলেও নানা সংকটে বংশপরম্পরায় এসব স্থাপনা সংস্কার-সুরক্ষার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
পূর্ণচন্দ্র রায়ের বংশধর মিহির লাল রায় জানান, বৃন্দাবনচন্দ্র রায় তেলের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। এরপর জমিদারি থেকে তার সম্পদ বৃদ্ধি পায়। বৃন্দাবনচন্দ্র রায়ের পর জমিদারির দায়িত্ব নেন আমার দাদা পূর্ণচন্দ্র রায়। তিনি মূলত বাড়িতে দালানকোঠা ও দৃষ্টিনন্দন মন্দির তৈরির উদ্যোগ নেন। বর্তমানে বাড়ির মূল ভবনটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত। বর্ষায় ভবনটির অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন আগে ধসে পড়েছে প্রাসাদের সামনের দেয়াল। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাসাদের বাকি অংশটুকু।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল কাইয়ুম জানান, মিরুখালীর রায়বাড়িটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবার হিসেবে তাদের খ্যাতি রয়েছে। বিভিন্ন পূজা-অর্চনায় এই মন্দিরটিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়।